ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

কীভাবে বুঝবেন কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত কিনা?

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৩০ জুন ২০২৫

কীভাবে বুঝবেন কেউ মানসিক রোগে আক্রান্ত কিনা?

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় এর লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, বা মানুষ এটিকে সাধারণ মন খারাপ ভেবে ভুল করে। তবে, কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন খেয়াল করলে মানসিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব।

সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ:

মানসিক রোগের লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সমস্যা বা রোগের প্রকারভেদে এর প্রকাশও বিভিন্ন হয়। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে:

  • মেজাজ ও অনুভূতিতে পরিবর্তন:

    • দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ বা বিরক্তি: কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে মন খারাপ থাকা, বিষণ্ণতা বা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।

    • হঠাৎ মেজাজের চরম পরিবর্তন: অল্পতেই রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত উত্তেজনা, বা হঠাৎ করে বিষণ্ণ ও হতাশ হয়ে পড়া।

    • মূল্যহীনতা বা অপরাধবোধ: নিজেকে অযোগ্য, মূল্যহীন বা সবকিছুতে নিজেকে দায়ী মনে করা।

    • আশাহত বা হতাশাবাদী অনুভূতি: ভবিষ্যতের প্রতি কোনো আশা না থাকা বা সব কিছু খারাপ হবে এমনটা মনে করা।

  • আচরণগত পরিবর্তন:

    • সামাজিকতা থেকে বিচ্ছিন্নতা: বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্য থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, একা থাকতে চাওয়া এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এড়িয়ে চলা।

    • ব্যক্তিগত পরিচর্যার প্রতি অনীহা: গোসল করা, দাঁত মাজা বা পরিষ্কার পোশাক পরার মতো সাধারণ দৈনন্দিন কাজগুলো করা বন্ধ করে দেওয়া।

    • ঘুমের ধরণে পরিবর্তন: অস্বাভাবিকভাবে কম ঘুমানো (অনিদ্রা) বা অতিরিক্ত ঘুমানো।

    • খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন: খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে বেশি খাওয়া (যেমন - অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া)।

    • ঝুঁকিপূর্ণ বা আবেগপ্রবণ আচরণ: নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা (যেমন: হাত-পা কাটা) বা আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা বা চেষ্টা করা।

    • নেশার প্রতি আসক্তি: অ্যালকোহল বা মাদকের অতিরিক্ত ব্যবহার শুরু করা।

  • চিন্তাভাবনা ও মনোযোগে পরিবর্তন:

    • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা ভয়: কারণ ছাড়া বা ছোট বিষয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, অজানা ভয় বা উদ্বেগে ভোগা।

    • মনোযোগের অভাব: কোনো কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা এবং স্মৃতিশক্তির সমস্যা।

    • অমূলক বা অবাস্তব চিন্তা: গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া (হ্যালুসিনেশন), অথবা মানুষকে অকারণে সন্দেহ করা (প্যারানয়িয়া)।

    • একই কাজ বারবার করা (শুচিবায়ু): বারবার হাত ধোয়া, কোনো কিছু বারবার পরীক্ষা করা বা বাতিকগ্রস্ততা।

  • শারীরিক লক্ষণ:

    • অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শক্তির অভাব: কোনো কাজ করতে ইচ্ছা না করা বা সারা দিন ক্লান্ত অনুভব করা।

    • অব্যক্ত শারীরিক ব্যথা: সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন অংশে (যেমন: মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, বা জয়েন্টে ব্যথা) ব্যথা অনুভব করা।

    • শারীরিক অস্থিরতা: বুক ধড়ফড় করা, গলা শুকিয়ে যাওয়া বা হাত-পা কাঁপা।

কখন পেশাদার সাহায্য নেবেন?

উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেখা যায় এবং তা তার স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে, তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে তার মানসিক সমস্যা আছে। মনে রাখা জরুরি, এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই যে ব্যক্তি মানসিক রোগে আক্রান্ত, তা বলা যায় না। তবে, যখন এই লক্ষণগুলো তীব্র হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যকলাপে গুরুতর প্রভাব ফেলে, তখন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখবেন, মানসিক অসুস্থতা কোনো দুর্বলতা নয়, এটি একটি রোগ, এবং সঠিক চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব। এই বিষয়ে ভয়, লজ্জা বা সংকোচ না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সাব্বির

×