ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

সহমর্মিতা মানবিকতা

নকীবুল হক

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২৮ আগস্ট ২০২৪

সহমর্মিতা মানবিকতা

মানুষ সামাজিক জীব

মানুষ সামাজিক জীব। সামজেই তার জন্ম, সমাজেই তার মৃত্যু। একটি সমাজে বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ শ্রেণিপেশার মানুষ বসবাস করে। সেখানে কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সবাই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সমাজে চলতে ফিরতে মানুষ নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। কখনো বিপদআপদে পতিত হয়, কখনোবা বিষণœতা কিংবা হতাশায় নিমজ্জিত হয়।

এইসব নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অন্যের দুঃখে সাড়া দেওয়ার সহজাত সামর্থ্য কিংবা ব্যক্তির সঙ্গে মানসিকভাবে একাত্ম হওয়ার নামই সহমর্মিতা। সহমর্মিতা এমন একটি গুণ যা আমাদের মানবিক করে তোলে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, নেতিবাচক আবেগ আমাদের সহমর্মিতার মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। একে ‘সহমর্মিতার পীড়া’ বলে অভিহিত করা হয়।

এই গবেষণা থেকে আরও জানা যায়, যাদের সহমর্মিতার মাত্রা কম থাকে, তারা দান করার ক্ষেত্রেও কম আগ্রহ অনুভব করেন। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নেতিবাচক আবেগ আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের মস্তিষ্ককে নেতিবাচক আবেগ থেকে বাঁচাতে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের চর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে সহমর্মিতা প্রকাশের অন্যতম একটি উপায় হলো অসহায়, বিপদগ্রস্তকে দান করা।

সম্প্রতি অতিবৃষ্টি এবং ভারতের ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় আকস্মিক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ আরও কয়েকটি জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ পরিবার। ইতোমধ্যে বন্যার্ত অসহায় মানুষদের আর্তনাদ ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই মুহূর্তে মানুষ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা। সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।  

ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই পাশে দাঁড়ানো, সহমর্মিতা প্রকাশ একটি মহৎ মানবিক গুণ, কল্যাণকর কাজ। যুগে যুগে যত মহামানব পৃথিবীতে এসেছেন, তারা সবাই ছিলেন অন্যের প্রতি সহমর্মী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন।

তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’  বিপদআপদে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা, সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের মানবিক দায়িত্ব। ভারতীয় শিল্পী ভুপেন হাজারিকা গেয়ে গেছেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য।’ মানুষের কল্যাণে কাজ করে, মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে ব্যক্তি হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ।

মানুষের কল্যাণে কাজ করার মাঝেও রয়েছে প্রকৃত সুখ। তাই তো কবি কামিনী রায় লিখেছেন, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী’ পরে,/সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’ 
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×