ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেধাবীরা কি রাজনীতি করবে না

মমতাজ লতিফ

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

মেধাবীরা কি রাজনীতি করবে না

মেধাবীরা কি রাজনীতি করবে না

তারা কারা? দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। বলা চলে দেশের ভবিষ্যৎ এবং দেশের মুখোজ্জ্বল করবে ওরা। কিন্তু কোথায়? বিদেশে পশ্চিমা দেশে নানা ক্ষেত্রে ওদের এবং দেশের খ্যাতি হবে। কিন্তু ওরা পশ্চিমাদেশের তুলনায় বিনা খরচে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে পড়াশোনা করার সুযোগ লাভ করেছে, তা তাদের স্মরণ আছে কি?

মনে প্রশ্ন জাগে- মেধাবীদের সেবা পাচ্ছে পশ্চিমা উন্নত দেশ, দরিদ্র স্বদেশ তাদের শিক্ষা দিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করেছে, কিন্তু তারা তাকিয়ে আছে পশ্চিমের উন্নত দেশের দিকে। শুধু বুয়েট বললে ভুল হবে, অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বাবা-মায়ের মাঝারি মানের ছেলে-মেয়েরাও পশ্চিমা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে। লেখাপড়া শেষে অনেকে ওখানেই চাকরি করছে।

তবে তাদের অধিকাংশ মেধাবী নয়। একটা প্রশ্ন মনকে বেদনাবিদ্ধ করে, মেধাবীরা রাজনীতিকে অচ্চুৎ মনে করছে কেন? আমরা যখন ৬০-এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে মেধাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত। মনে পড়ে, ক্লাস চলাকালে এক একজন কৃতী ছাত্র-ছাত্রীকে ডাকসু এবং হল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে প্রার্থী হিসেবে সব ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো।

আমরা তাদের ক্রেডেনশিয়াল জেনে উৎফুল্ল হতাম। শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ করে হাসিমুখে মিনিট দশেকের জন্য এই সুন্দর সুশৃঙ্খল প্রচারণার জন্য সময় দিতেন। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনীতি চর্চা রাজনীতিকে উন্নত মানের সুশৃঙ্খল করে তোলে এবং দেশের দক্ষ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়- এটিই সে সময় আমরা জানতাম।

তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল, মনসুর আলী, কামরুজ্জামানসহ সে সময়ে প্রত্যেক জেলায় ছিল উজ্জ্বল মেধাবী রাজনীতিকদের বিচরণ ক্ষেত্র। বঙ্গবন্ধুর রচনায় বাংলা-ইংরেজি এত ভালো মানের এবং তাঁর বোঝার ক্ষমতা, পদক্ষেপ গ্রহণের মেধাবী সিদ্ধান্ত দেখে, আমরা তাঁর অসংখ্য স্বদেশ উন্নয়নের কাজের তালিকা দেখে বিস্মিত হই। দেশের কাজ করে পড়াশোনায় সময় দিতে না পারা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিকে সীমিত করতে পারেনি।

এর পরের ছাত্র নেতারাও রাজনৈতিক বুদ্ধি-কৌশল দ্বারা সমৃদ্ধ ছিলেন। যে কারণে ’৬৯-এর ছয় দফাকে ছাত্ররাই এক দফা- ‘স্বাধীনতার দাবি’তে রূপান্তরিত করে। ছাত্র নেতারা নির্ভুলভাবে বঙ্গবন্ধুকে এ আন্দোলনের নেতার স্বীকৃতি দিয়েছে। ধাপে ধাপে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি, ‘পতাকা তৈরি’, ‘অস্ত্র প্রশিক্ষণ’ গ্রহণ করে ভারতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর জন্য দেশত্যাগ, তারপর যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সুনিপুণ পরিকল্পনার পরিচয় দেয়, যা মেধাবী রাজনীতি ও সমরবিদ্যার সমন্বয়ে সুসংহত হয়েছিল- সন্দেহ নেই। এই রক্তাক্ত, অসীম আত্মত্যাগের অতি উন্নত রাজনীতিভিত্তিক মাতৃভূমির জন্মের ইতিহাসকে প্রতিটি বাঙালির, মেধাবীরাসহ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখা উচিত।
ভাবছি, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর- বর্তমান কালের প্রযুক্তি শিক্ষিত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এই গৌরবময় কীর্তি কথা কি ধূসর, দাদা-দাদি, নানা-নানিদের আমলের পুরনো গল্প-কথা হয়ে উঠেছে? এটা সত্য যে- আমাদের স্বাধীনতার দাবিতে করা মিছিল-মিটিং-পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ, শহীদ মতিউর, শহীদ আসাদসহ অসংখ্য নাম না জানা শহীদের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের শুরু এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিকদের মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠা, মরণপণ লড়াই আমাদের এখনো যেভাবে বুকে কম্পন তোলে, চোখে অশ্রু নিয়ে আসে, তা এখনকার ছেলে মেয়েদের মনে সেভাবে তেমন অনুভূতি জাগাবে না।

তবু সেদিনের প্রধান নেতা- বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের অমোঘ ধ্বনি, কালের ডাক উপলব্ধি করা এবং সব দল-মত-শ্রেণি-পেশার মানুষকে সে ডাকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো একমুখী স্রোতে এক লক্ষ্যে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন তা নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে আমরা বারবার বিস্মিত ও পুলকিত হই। আশ্চর্য হই পুরো জাতি একজন নেতার সঠিক সিদ্ধান্তকে মান্য করে মাতৃভূমির স্বাধীনতার বেদিতে প্রাণোৎসর্গ করতে ছুটে গিয়েছিল। এক অসম্ভব দুঃসাধ্য কাজ যুদ্ধের ময়দানে ‘শত্রুর বিরুদ্ধে যার যা কিছু আছে’, তাই নিয়ে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল।

সত্যিই কল্প কথার মতোই এ কাজটি সেদিন ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-জনতা মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তর লাভ করেছিল জাদুর কাঠির স্পর্শে। ঘুম ভেঙে বাঙালি পেল রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র, যাতে শত্রুকে নিঃশেষ না করা পর্যন্ত বাঙালির অস্ত্র হাতে লড়াই করা ছাড়া আর সব কাজ-খাওয়া-দাওয়া-ঘুম-বিশ্রাম-লেখাপড়া, কাজকর্ম থেমে গিয়েছিল। সেই দিনগুলোর কথা বাস্তবে যারা দেখেছিল, তাদের এখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে।

অনেকেই চলে গেছেন। বুয়েটের সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ কথাগুলোই মনে উঠে আসছে- স্বর্ণখচিত কিন্তু মহাবিপদ সঙ্কুল ’৭১-কে মনে পড়ছে। কতগুলো প্রশ্নও মনে মাথা তুলছে- বুয়েটের প্রথম ছাত্রী হত্যা, মেধাবী সনির হত্যা কেন, কিভাবে ঘটেছিল? খুনিরা এখন কোথায় বসবাস করছে? তাদের তো বিচার কাজ শেষ হয়নি। কেন?
বুয়েটে বহু আগে থেকে জামায়াত-শিবিরের অবস্থান ছিল। যার ফলে ছাত্রদের মধ্যে অনেক মারামারি হয়েছে, যা ছিল প্রায় একমুখী। অর্থাৎ জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের হাতে মার খেত ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে দীপ নামের মেধাবী প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি করা ছাত্রটি শিবিরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে প্রায় এক মাসের মতো স্কোয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে মারা যায়। দীপের সুস্থতার জন্য আমাদের প্রার্থনা কোনো কাজ করেনি।

সে সময় বুয়েটের প্রগতিশীল ছাত্র গোষ্ঠী জামায়াত-শিবিরের তা-বের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেছিল। এ সময় আমার ভাইপো বুয়েট ছাত্র ওদের শহীদ মিনারে অপর কয়েকজনের সঙ্গে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ করলে আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। কিন্তু দীপ বাঁচেনি। অনশনরতদের পরে বুয়েট কর্তৃপক্ষের চাপে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। এর পরপরই বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হলে ছাত্রদের হল ত্যাগ করতে হয়।

তাহলে বুয়েটে যে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়ার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জামায়াতকে পুনর্বাসন করার ফলে দেশবিরোধী হত্যা, গুম, খুন, রগকাটা, গলাকাটার অপরাজনীতি বিস্তার লাভ করেছিল, তা নিশ্চয়ই অনেকের এখনো মনে আছে। শিক্ষকদের মধ্যে জামায়াতপন্থিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা জিয়ার শাসনকালের পরেও দীর্ঘদিন যাবত বুয়েটে এক অশান্তির পরিবেশ বজায় রেখেছিল।

এমনকি ২০০৮ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলের সমন্বয়ে গঠিত মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পরও বুয়েটের কিছু জামায়াতপন্থি শিক্ষক সরকারের নীতি ভঙ্গ করে নিয়মবহির্ভূত নানা দাবি করে বুয়েটে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করেছিল। পরে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে ধীরে ধীরে বুয়েট পরিস্থিতি শান্ত করে।

এসব অপঘটনা বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। মেধাবী হলে কি শিক্ষার্থীরা বুয়েটের শুধু মন্দ ইতিহাস মনে রাখবে? হত্যার অপরাজনীতি কি ভুলে থাকবে?
বর্তমান শিক্ষার্থী যারা সুনির্দিষ্টভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সূচনার আভাস পেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের চলমান নীতিটি বলবৎ রাখতে নানাভাবে দাবি জানাল, তাদের কাছে প্রশ্ন- চার-পাঁচ মাস আগে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যে চব্বিশ জন জামায়াত-শিবিরকর্মী গোপন আলোচনা সভায় মিলিত হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল, তারা কি কারণে তোমাদের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হলো?

তাদের গোপন সভা যা অবশ্যই ছিল ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি এবং তাদের অতীত ইতিহাস বের করে সবকিছুর বিচার দাবি, তাদেরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠল না কেন? মেধাবীরা কি শুধু ছাত্রলীগকেই ভয় পায়? কেন? ফাহাদ হত্যায় যারা সম্পৃক্ত ছিল, সবাই সরকারি দলের হলেও তারা পরদিনই গ্রেপ্তার হয় এবং তাদের বিচার ও শাস্তি হয়েছে, এটিতে তো তোমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। সে সঙ্গে প্রশ্ন- তোমাদের কাছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি কি তাহলে কম ভীতিকর? 
‘মেধাবী’ জিনিসটা কি? এটা দিয়ে আমরা কি করব? দেশমাতা তার ছেঁড়া আঁচলে অশ্রু মুছে তোমাদের সেবাবঞ্চিত হবে আর তোমাদের টা টা জানাবে? তোমাদের জানা আছে- পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই ছাত্র সংসদ আছে, নির্বাচনও হয়। আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতি তো এমন মারামারি, দলাদলিযুক্ত ছিল না। কেন ছাত্র রাজনীতিতে মারামারি-দলাদলি প্রবেশ করল? কার দ্বারা? মেধাবীদেরও জানতে হবে- বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোন সেনাশাসক ঘোষণা দিয়েছিল, ‘আই উইল মেক পলিটিক্্স ডিফিকাল্ট’। এর পরপর যে ঘটনাগুলো তিনি অর্থাৎ জিয়াউর রহমান ঘটালেন তা হচ্ছে-
ক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের সবাই পরে গু-া-ক্যাডার হিসেবে চেনে- অভি, নিরু, বাবলুসহ আরও কজনকে ডাকলেন, তাদের কর্তব্য বুঝিয়ে দিলেন। হাতে তুলে দিলেন রাইফেল, কাটা বন্দুক, প্রচুর অর্থ। এই হলো শুরু।
ক্স জিয়াই বিএনপির লেজুড় হিসেবে ‘ছাত্রদল’কে স্বীকৃতি দেয়। যার পর স্বাধীন ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়।
ক্স অনেকের জানা আছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময় বুয়েটের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী, স্টার-লেটার মার্ক এবং মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী অর্থনীতিতে, ফার্মেসিতে, ফিজিক্সে, কেমিস্ট্রিতে, ম্যাথ্সে অনার্স পড়তে আসত। আমার নিজের ব্যাচের অর্থনীতি অনার্স বিভাগকে ‘নক্ষত্রের সমাবেশ’ বলা হতো। 
ক্স এই সময়ে ছাত্রলীগ ছিল সভ্য-ভব্য। তাদের পাশে সমাজতান্ত্রিক দর্শনে নিবেদিত ভদ্র, রুচিশীলদের দল ছাত্র ইউনিয়ন ছিল সব হলে দাপটের সঙ্গে। জিয়াউর রহমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গু-া-ক্যাডারভিত্তিক বিএনপির ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রদল’ গঠন করে সব উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়।
পাশাপাশি জামায়াতকে পুনর্বাসন করে জিয়াউর রহমান তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ’৭১-এর আলবদর, আলশামসের অনুসরণে ‘ছাত্রশিবির’ নামক রগকাটা, গলাকাটা, পেশিশক্তিনির্ভর ক্যাডার দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এক সময় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির ক্যাডারদের ক্ষমতার একচ্ছত্র কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। বুয়েটেও এদের দাপটের কাছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা মুখ বুজে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেত।

মেধাবীরা দেশ ছেড়ে উন্নত দেশে উচ্চতর পাঠ ও গবেষণা করতে যাবে। তাই বলে রাজনৈতিক চেতনাহীন মেধাবী তারা হবে কেন? দেশ স্বল্প বেতনের বিনিময়ে তাদের উচ্চশিক্ষা দিচ্ছে। সে দেশকে কি কিছুই দেওয়ার নেই মেধাবীদের? তাছাড়া, যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতি বা রাজনীতি চর্চা করে না, আগেও, এখনো এটাই রীতি। কিন্তু একজন শিক্ষিত নাগরিক দেশের ভালো-মন্দ বুঝবে এবং অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে রক্ষার কাজ করবে। যেমন- ২০১৩ তে শাহবাগে আমাদের চমকে দিয়ে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠা করেছিল তরুণ প্রজন্ম।

তাদের অনেককেই কট্টর ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর খুনিদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল- এসব সত্য ইতিহাস মেধাবীদের জানতে হবে। অসচেতন মেধাবী কি খুব বেশিদূর যেতে পারে? অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা মাইক্রোবায়োলজিতে বড় আবিষ্কার বিজ্ঞানের জন্য ভালো। কিন্তু বর্জ্য থেকে দেশে সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদন বা লবণাক্ত পানিতে ফসল ফলাতে পারা দেশ ও পৃথিবীকে রক্ষা করবে, তাই না? সব শেষে বলতে চাই- একজন শিক্ষিত মানুষের একটি মতামত থাকবে।

শিক্ষিত সব সময় একটি পক্ষকে সমর্থন করবে, যে পক্ষ দেশ ও মানুষের জন্য ইতিবাচক কাজ করে। উপরন্তু, শিক্ষিত মেধাবীকে রাজনীতি সচেতন হতে হবে এবং মাতৃভূমির স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে- এটাই তো কাক্সিক্ষত ও স্বাভাবিক।
লেখক : শিক্ষাবিদ

×