
.
দেশের ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় হলো পাট। স্বাধীনতার পরে পাট ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। আমাদের দেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নতমানের পাট উৎপন্ন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বছরে দেশে উৎপাদন হয় ৮৫ থেকে ৯০ লাখ বেল কাঁচাপাট। এখনো পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। তবে বর্তমান সময়ে এসে পাটের ন্যায্য দাম নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পাটচাষিরা। উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। তাদের পানির দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে পাটের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিছুদিনের ব্যবধানেই ঘটে দরপতন। উৎপাদিত পাট নিয়ে কৃষকরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কিন্তু সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। যার অন্যতম কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগী।
মৌসুমের শুরুতে দামের আধিক্য তাদের লোভ বাড়িয়ে দেয়। এখন তারা একচেটিয়া পাট মজুদে ব্যস্ত। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ কৃষক। পাটশিল্পের ক্ষতির পেছনে আরও একটি কারণ পলিথিন এবং প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রণহীন প্রসার। বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত পলিথিনের ব্যবহার কমার বদলে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। প্লাস্টিক, পলিথিন মাটিতে মিশতে সময় লাগে প্রায় চারশত বছর। মাটিতে মিশতে যে ব্যাকটেরিয়া পলিথিনের বিয়োজন ঘটায় তা মিথেন নামের এক ধরনের গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে। পলিথিন মাটির পাশাপাশি বায়ুকেও দূষিত করছে। সেক্ষেত্রে পাটের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই আমাদের পরিবেশ রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারি। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও অনেক দেশই এখন প্লাস্টিক বর্জন করে পাটজাত পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। পাট সহজে পঁচনশীল এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটির কদর আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলস্বরূপ কৃষকরা আবার পাটচাষে উৎসাহী হয়েছেন। পলিথিনের ব্যবহারের প্রসারের ফলে পাটের যে ক্ষতি হয়েছে চাষিরা তা পূরণের স্বপ্ন দেখছেন।
অল্প যে কয়টি পাটকল এখনো টিকে আছে সেগুলোকে আধুনিক করতে হবে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক দিন দিন সেই পাট চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। মধ্যস্বত্বভোগীরা একদিকে মজুত বাড়িয়ে কৃষকদের সঠিক মূল্য দিতে নারাজ, অন্যদিকে তারা বলছে গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। বিজেএমসি ২২টি সরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন পাট কিনতে আগ্রহী নয়। একমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাই পারে বাংলাদেশের মৃতপ্রায় সোনালি আঁশকে পুনরুজ্জীবিত করতে। সরকার যদি মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে নেয় তাহলে একদিকে যেমন কৃষক তাদের পরিশ্রমের ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি মজুদদারদের কবল থেকে রক্ষা করে সোনালি আঁশ দিয়ে আবার দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব হতে পারে।