ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

পান চাষে ভাগ্যে বদল জাকারিয়ার, মাসে আয় লক্ষ টাকা

শহিদুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,নওগাঁ

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:৫৩, ১৭ জুন ২০২৫

পান চাষে ভাগ্যে বদল জাকারিয়ার, মাসে আয় লক্ষ টাকা

নওগাঁ জেলার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে একসময় চুক্তিভিত্তিক মিটার রিডার ছিলেন মো. জাকারিয়া। প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রামে ছুটে বেড়ানো, সীমিত আয় আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছিল তার জীবনের বাস্তবতা। তবে আজ তিনি একজন সফল পানচাষী ও উদ্যোক্তা। মাসে আয় করেন ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা, কর্মসংস্থান দিয়েছেন আরও ২০ জনকে।

জাকারিয়ার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘমারা উপজেলার মতোদৌলতপুর গ্রামে হলেও তার জীবনের বড় পরিবর্তন শুরু হয় নওগাঁতেই। ২০০৮ সালে নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে চাকরি নিয়ে আসেন তিনি। প্রায় এক বছর নওগাঁর বিভিন্ন গ্রামে মিটার রিডিংয়ের কাজ করেন। এই সময়ের অভিজ্ঞতা, জীবনসংগ্রাম ও মানুষের কাছ থেকে পাওয়া বাস্তব শিক্ষা তাকে ধীরে ধীরে ভাবতে শেখায়—কিছু একটা বদলানো দরকার।

চাকরির অনিশ্চয়তা ও সীমিত আয় দেখে একসময় সিদ্ধান্ত নেন কৃষিকাজে ফেরার। নওগাঁতে কাটানো সময়েই পান চাষ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে। ফিরে গিয়ে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা হাতে নিয়ে ৩৩ শতক জমি ইজারা নিয়ে শুরু করেন পান চাষ।

পান চাষে তখন তেমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও সাহস ছিল। স্থানীয় চাষীদের পরামর্শ, নিজের শ্রম আর মাঠ পর্যায়ের শিক্ষায় প্রথম বছরেই পান থেকে ভালো লাভ পান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আজ তাঁর বরজ ছড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। নিয়মিতভাবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন সেখানে। প্রতিসপ্তাহে পান বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার। মাস শেষে আয় দাঁড়ায় গড়ে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।

জাকারিয়া বলেন, “নওগাঁ আমাকে জীবনের অনেক কিছু শিখিয়েছে। চাকরি করেও বুঝেছি, কৃষিতেই আমার ভবিষ্যৎ। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে এখন নিজে ভালো আছি, অন্যদেরও কাজে লাগাতে পারছি।”

বর্তমানে জাকারিয়া শুধু সফল চাষীই নন, এক ধরনের কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর সাফল্য দেখে আশপাশের তরুণরা উৎসাহিত হয়ে পান চাষে ঝুঁকছেন। অনেকেই তাঁর কাছ থেকে পান চাষের মৌলিক শিক্ষা নিচ্ছেন। বরজের শ্রমিক মাসুদ বলেন, “আমি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বরজে কাজ করি। এই কাজটাই আমার জীবিকার একমাত্র উৎস। এখান থেকে যা পাই, তা দিয়েই আমার পরিবারের খরচ চালাই, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করি, ওষুধ কিনি, বাজার করি।

আরেক শ্রমিক জানান, আমি এখানে প্রায় ২ বছর ধরে কাজ করি এতে করে আমাদের যেমন লাভ হচ্ছে তেমনি মালিকও লাভবান হচ্ছে। এটাতে খরচ বেশি কিন্তু একবার পানের গাছগুলো ভালো থাকলে অনেক লাভ আসে। স্থানীয় কৃষক আনোয়ার বলেন,জাকারিয়া ভাই এর থেকে অনেক কিছু শিখার আছে আমাদের।  প্রতিদিন এখানে এসে দেখি কিভাবে পান চাষ করে ভবিষ্যতে আমরাও পান চাষ করবো।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন,আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তার পাশে আমরা সব সময় আছি। 

আঁখি

×