ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতারিত হলে কী করবেন?

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৭ জুন ২০২৫

গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতারিত হলে কী করবেন?

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকেই গোপনে ধারণকৃত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মানসিক নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আইন অনুযায়ী এই অপরাধগুলোর যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে এবং প্রতিকার পাওয়ার সুযোগও রয়েছে।

যদি কেউ বিশেষ কৌশলে আপনার ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে এবং তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় বা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ বা যৌন সুবিধা দাবি করে, তাহলে আপনি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। অনেক সময় দেখা গেছে, কেউ সরাসরি যৌতুক না চেয়ে স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে টাকা আদায় করছে। এমনকি অনেক প্রেমিকও ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে। এখন এটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, যদি কেউ অশ্লীল ভিডিও, ছবি, সংলাপ বা অঙ্গভঙ্গি ধারণ করে এবং তা ছড়িয়ে দেয় বা তা দিয়ে কাউকে হুমকি দেয়, প্রলোভন দেখায়, মানসিক চাপ তৈরি করে কিংবা আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে। এছাড়া, কেউ যদি ইন্টারনেট, মোবাইল বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে এসব কনটেন্ট সরবরাহ করে, তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

এই আইনে শুধু ভিডিও নয়, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী যেকোনো স্থিরচিত্র, কার্টুন, লিফলেট, ভাস্কর্য কিংবা বই— যার কোনো শিক্ষাগত বা শৈল্পিক মূল্য নেই— সবকিছুই পর্নোগ্রাফির আওতাভুক্ত। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ এনে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

এই ধরনের অপরাধের শিকার হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো প্রমাণ সংগ্রহ। ব্ল্যাকমেইল, হুমকি বা প্রতারণার যেকোনো স্ক্রিনশট, ভিডিও রেকর্ড, ওয়েব লিংক বা বার্তা সংরক্ষণ করুন। এগুলো তদন্তে সাহায্য করবে এবং আদালতে উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হবে।

আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আপনি থানায় গিয়ে এজাহার দাখিল করতে পারেন। যদি থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে সরাসরি সাইবার ট্রাইব্যুনালে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে পিটিশন দাখিল করতে পারেন। দেশের প্রতিটি বিভাগেই একটি করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, যেখানে এই ধরনের অপরাধের বিচার হয়।

এছাড়াও, কেউ যদি আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, ব্যক্তিগত ছবি বা কথোপকথন ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং বিনিময়ে অর্থ দাবি করে, অথবা আপনার নাম-ছবি ব্যবহার করে ভুয়া আইডি খুলে বিভ্রান্তিকর বা অশ্লীল পোস্ট করে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা যাবে। এমনকি ই-কমার্সের নামে প্রতারণা, ভুয়া বিকাশ নম্বর থেকে ফোন করে লটারির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ কিংবা ভুয়া মেসেজ পাঠিয়ে ধোঁকা দেওয়ার ঘটনাও এই আইনের আওতায় পড়ে।

যদি কেউ অনলাইনে অহেতুক উত্যক্ত করে, সম্মানহানি করে বা মানসিক হয়রানি করে, সেটিও সাইবার বুলিং হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এ ধরনের অপরাধের প্রতিকারও আপনি আইনি পথে পেতে পারেন। মনে রাখবেন, ভয় নয়— সাহস ও সচেতনতার মাধ্যমে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। আইন আপনার পাশে আছে।

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×