ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত- দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৫ মার্চ ২০২৩

স্বাগত- দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি

মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ নির্মম নির্যাতন চলে প্রায় দুই বছর ধরে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওইসব ঘটনার তদন্তে ২০০৯ সালে ‘বিচার বিভাগীয় কমিশন’ গঠন করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন। সারাদেশ ঘুরে নির্যাতিত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি থেকে তুলে আনেন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। তাঁর ভাষায় ‘এটি ’৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চেয়ে কোনোভাবেই কম ছিল না।’ তখন সারাদেশে প্রায় ১৬ হাজার নির্যাতনকারীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল

রাজনৈতিক চমকই বটে। দেশের একুশতম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পর কে হচ্ছেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত? এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে গত কয়েকমাস। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনায় তাঁর নাম আসেনি একবারও। সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানও খুঁজে পায়নি তাঁকে। তিনি নিজেও জানতেন না এমন একটি মহান দায়িত্ব অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। ১২ ফেব্রুয়ারি ’২৩ রবিবার সকালে সবাই জানতে পারলেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সেদিনই ছিল নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়। অবশ্য তিনি নিজে জানতে পেরেছিলেন ৯ ফেব্রুয়ারি। কৌশলগত কারণে তিনিও এই তথ্য প্রকাশ করেননি। সবাই জানতে পেরেছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বরাবরই চমক দিতে পছন্দ করেন। ১৯৯৬ সালে দেশের অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন এ নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ছিল। তখন আমরা কয়েকজন সাংবাদিক তাঁর খুব কাছাকাছি থাকতাম। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী? তিনি মুখ টিপে হেসে শুধু বলেছিলেন, ‘চমক’। শাহ এএমএস কিবরিয়াকে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ ছিল সত্যিই চমক, কারণ তাঁর কথা তখন কেউ চিন্তা করেনি। এর পর তিনি অনেক চমক দিয়েছেন। বিশেষ করে মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে তিনি বারবারই চমক দিচ্ছেন।

মন্ত্রিসভা গঠনের আগে অনেকেই জানতে পারেন না পরদিন তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। এমন অনেককে মন্ত্রিসভায় তিনি স্থান দিয়েছেন যাদের কথা কোনোদিন আলোচনায় স্থান পায়নি। তারাও কোনোদিন কল্পনা করেননি দেশের মন্ত্রী হবেন। অনেকে এমপি হবেন কিনা এ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। এমপি মনোনয়ন ও নির্বাচিত হয়ে প্রত্যাশার বাইরে ডাক পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভা গঠন কিংবা নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অনুমানভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনের আগ্রহও কমে গেছে। সবকিছুই হচ্ছে অনুমানের বাইরে চমক।     
কেমন হয়েছে চমক দেখানো নতুন রাষ্ট্রপতি, এই প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতির একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে। তিনি প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন পোড় খাওয়া মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা। পঁচাত্তর পরবর্তী সময় তাঁকে গ্রেফতার করে ডা-াবেড়ি দিয়ে রাখা হয়েছিল, কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী। তিনি জুডিসিয়াল সার্ভিসেও চাকরি করেছেন।

বিএনপির আমলে বাধ্য হয়ে তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। তাঁর মাঝে দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম রয়েছে। প্রচার বিমুখতার কারণে তিনি হয়ত সেভাবে সামনে আসেননি।’ প্রধানমন্ত্রী এভাবেই মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সাধারণ মানুষের কৌতূহল মিটিয়েছেন।
চমক হলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের জন্য ব্যক্তি নির্বাচন তাৎক্ষণিকভাবে একদিনে হয় না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চার দশকের বেশি সময় ধরে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এর আগেও তাঁর পিতা, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। রাজনীতির হাতেখড়ি মূলত পিতার হাতেই। ’৭৫ সালের পনেরো আগস্ট সব হারানোর পর পাঁচ বছরের প্রবাস জীবন, চার দশকের বেশি সময় রাজনৈতিক উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতায় তিনি নিজে এখন পরিপূর্ণ রাজনীতিক।

এই সময় কাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারবেন সেই বিবেচনায় ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাঁর দল আওয়ামী লীগও এই সত্য বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি নিয়োগে তাঁকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে দেখে-শুনে-বুঝেই তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এভাবেই তিনি দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে রেখে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্বাচন করেন। 
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধানমন্ত্রী পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় কমিশন প্রধান হিসেবে তাঁর সাহসী পদক্ষেপ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে তাঁকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার পদে নিয়োগ দেন। দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালনকালেও তিনি সাহসিকতা, সততা এবং কর্মনিষ্ঠার পরিচয় দেন। কর্মজীবন শেষে তিনি আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং পাবনার একটি আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

প্রায়ই তাঁর পুরনো রাজনীতির চারণভূমি পাবনা সফর করতেন এবং এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শেখ হাসিনা তাঁকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন সম্পর্কিত কমিটির সদস্য নিয়োগ করেন। এই কমিটি দলীয় অংশগ্রহণে সকল নির্বাচনের আইনগত দিক পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে দেন-দরবার করে থাকে। এইচ টি ইমামের মৃত্যুর পর শোনা গিয়েছিল তাঁকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হবে। অদৃশ্য কারণে এই নিয়োগ আর সম্পন্ন হয়নি। হয়ত প্রধানমন্ত্রী তখন থেকেই দেশের রাষ্ট্রপতি পদের জন্য তাঁর সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেছিলেন।

ছোটবেলায় চুপচাপ স্বভাবের কারণে মা-বাবা আদর করে ডাকতেন ‘চুপ্পু’। শিক্ষাগত সর্টিফিকেট কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে না থাকলেও বাবা-মায়ের স্নেহের উপহারটি তিনি নাম থেকে ছেঁটে ফেলেননি। রাজনীতিবিদ, বিচারক, দুদক কমিশনার, ব্যাংকের উপদেষ্টা, সংবাদ মাধ্যমে কলাম লেখা কিংবা টক শোতে ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামটিই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সার্টিফিকেট নামই লেখা হচ্ছে সবখানে। এ নিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতির অবশ্য খুব একটা মাথাব্যথা নেই। নামে কি আসে যায়।

ভবিষ্যৎ কর্মই তাঁকে জাতির কাছে নতুনরূপে পরিচিতি করবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি আর কোনো মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় নির্বাচন কমিশন তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছে। আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর শপথ নেওয়ার  কথা।

১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা জেলার সদর থানার জুবলীট্যাঙ্ক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। ছাত্রজীবনেই জড়িত হয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। ’৬৭-৬৮ সালে ছিলেন অ্যাডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ’৭০-৭৩ পর্যন্ত ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ’৭১ সালের শুরুতে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাবনা জেলা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে তিনি সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন মুক্তিযুদ্ধে।

সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি যুবলীগের জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করা হলে তাঁকে পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। একই বছর তিনি পাবনা আমিনউদ্দিন আইন কলেজ থেকে আইন পাস করেন। সেই বছর কলেজ থেকে ১০৩ জন পরীক্ষা দিলেও একমাত্র তিনিই পাস করতে সক্ষম হন এবং দ্বিতীয় বিভাগ লাভ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি পাবনায় প্রতিবাদ শুরু করেন। গড়ে  তোলেন প্রতিরোধ আন্দোলন। ২০ আগস্ট তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিন মাস অবিরাম নির্যাতন চলে তাঁর ওপর। তিন বছর কারাভোগ করে ’৭৮ সালে অনেকটা পঙ্গু অবস্থায় তিনি মুক্তিলাভ করেন। ’৭৮ সালে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন এবং বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি করেন।
’৯৫ সালে তিনি বিচারকদের সরাসরি ভোটে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। তখন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক গোলাম রসুল। মহাসচিব হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর বিচার কাজে তাঁর সভাপতিকে সহায়তা করেন। আপিল বিভাগে মামলার শুনানির সময় তাঁকে আইন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানা নিগ্রহে তিনি চাকরির মেয়াদ ১২ বছর বাকি থাকতেই ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনসহ নির্মম নির্যাতন চলে প্রায় দুই বছর ধরে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওইসব ঘটনার তদন্তে ২০০৯ সালে ‘বিচার বিভাগীয় কমিশন’ গঠন করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন। সারাদেশ ঘুরে নির্যাতিত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি থেকে তুলে আনেন নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র।

তাঁর ভাষায় ‘এটি ’৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চেয়ে কোনোভাবেই কম ছিল না।’ তখন সারাদেশে প্রায় ১৬ হাজার নির্যাতনকারীকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। 
তিনি ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুদকের কমিশনার নিযুক্ত ছিলেন। তখন বিশ^ব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিশ^ব্যাংকের একটি টিমও দুদকের সঙ্গে কাজ শুরু করে। বিশ^ব্যাংক মামলাটি তাদের মতো করে সাজানোর চেষ্টা করলে দুদক তাতে রাজি হয়নি।

দুদকের কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সাহসের সঙ্গে প্রকৃত সত্য উদ্্ঘাটনের কাজ করে যান। ক্ষিপ্ত বিশ^ব্যাংক দল তখন তাঁর বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে নালিশও করেছিল। দুদক সাহসের সঙ্গে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিশ^ব্যাংকের সকল অভিযোগ নাকচ করা হয়। তখন বিষয়টি রাজনৈতিক উল্লেখ করে অনেকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও দেড় বছর পর কানাডার আদালত একই রায় প্রাদন করে। দুদকের রিপোর্টের সঙ্গে এই রায়ের তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। আদালত বলেছে, ‘বহুল আলোচিত এই অভিযোগের কোনো সারবস্তু নেই।’ 
২০২০ সালে জানুয়ারিতে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। পরে তাঁকে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। একই সঙ্গে তাঁকে নির্বাচন সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনা কমিটির সদস্য নিয়োগ করা হয়। সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তাঁকে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকের অডিট কমিটির সদস্য নিয়োগ করা হয়।

কিছুদিন দায়িত্ব পালন শেষে তিনি নিজেই এই পদ থেকে সরে আসেন। পরে তাঁকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের উপদেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ তিনি সেই পদেই বহাল ছিলেন। তিনি সমসাময়িক বিষয়ে জনকণ্ঠসহ আরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর এক পুত্র। স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের যুগ্ম সচিব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পুত্র আরশাদ আদনান একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। যমজ দুই নাতি তাহসীন ও তাহমিন লেখাপড়া করছে।
ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ২০০৯ সালে। বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্যাতন তদন্তে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য থাকার সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তিনি রাজনৈতিক কর্মকা-ে যুক্ত হলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং ২০০৭-০৮ মেয়াদে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের পর দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলা পরিচালনায় তিনি আইনগত সহায়তা প্রদান করেন। তখনো বিভিন্ন আইনজীবীর কক্ষে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ এবং আলাপচারিতায় তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তিনি জনকণ্ঠের নিয়মিত লেখক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সমসাময়িক রাজনীতি ছিল তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম এই লেখালেখি অব্যাহত থাকবে কিনা।

তিনি বলেছেন, আইনগত কোনো বাধা না থাকলে অবশ্যই তিনি তাঁর লেখালেখি চালিয়ে যেতে চান। আজ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাঁর লেখা জনকণ্ঠে ছাপা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, বুদ্ধিবৃত্তিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফল হোন  মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত। 
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×