ভাগাড় বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে আবর্জনা, বর্জ্য আর পরিত্যক্ত বাতিল সব বস্তুর এলোমেলো সমাবেশ। নগরবাসীর কাছে অনেক সময়ই ডাস্টবিন ও ভাগাড় সমার্থক হয়ে ওঠে। তাই ভাগাড় বললে উচ্ছিষ্টের লাগামহীন জায়গাজুড়ে থাকাটাই চোখে ভাসে। বলাবাহুল্য, উন্মুক্ত ডাস্টবিন আমাদের পরিবেশ বিনষ্ট করে, দুর্গন্ধে তিষ্টানো দায় হয়ে ওঠে পথচারীর। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজের ভাগাড়ও থাকে। তার বিনষ্টি অন্যরকম। অবাক বিষয় হচ্ছে আমাদের প্রধান বিমানবন্দরটির একাংশ এখন এরকম ভাগাড়েই পরিণত হয়েছে। এতে বিমানবন্দরের অতি মূল্যবান জায়গা বেদখল হয়ে আছে। দু’চারটে নয়, এক কুড়ির ওপরে বাতিল উড়োজাহাজ এমন জায়গাজুড়ে ঘাড় গুঁজে আছে। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে এমন কিছু তথ্য পরিবেশিত হয়েছে যা একই সঙ্গে বিরক্তির কারণ এবং বিস্ময় জাগায়। প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয়েছে যে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং কার্গো ভিলেজ এ্যাপ্রোনের বিশাল অংশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে ২২টি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অকেজো উড়োজাহাজে ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রানওয়েতে। এতে করে বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কার্গোতে মালামাল পরিবহনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। রানওয়েতে তৈরি হয়েছে নিরাপদ বিমান চলাচলে শঙ্কাও। পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। পাশাপাশি কার্গোগুলোতে মালামাল ওঠানো ও নামানো সহজ হবে। তার মানে এসব কারণে নিত্যদিন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
দেশের মানুষ বহু প্রত্যাশিত থার্ড টার্মিনালের আশায় আছে। এটি হবে অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এই টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ করা হবে যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। সঙ্গত কারণেই এই থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এখন পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর কারণে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজে বিঘ্ন ঘটলে সেটি হবে অত্যন্ত হতাশাজনক এবং ক্ষতিকর। তাই এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই। আমরা বিস্মিত হই এই কথা ভেবে যে নষ্ট উড়োজাহাজগুলোর বকেয়া পার্কিং চার্জ প্রায় ৮০০ কোটি টাকাও অনাদায়ী রয়ে গেছে। আইনগত জটিলতার কারণে নিলামেও বিক্রি করতে পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে রীতিমতো ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছে বাতিল উড়োজাহাজগুলো। অর্থাৎ বিষয়টি সুরাহা হওয়ার পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাধি থাকলে তার দাওয়াই আছে। যে করেই হোক একটি সমাধান খুঁজে বের করা চাই। বকেয়া আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান রাখঢাক না করেই গণমাধ্যমকে বলেছেন, রানওয়েতে পরিত্যক্ত কিছু উড়োজাহাজ স্বাভাবিক বিমান চলাচল কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ক্ষেত্রেও এগুলো প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত বিমান অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
আমরা আশঙ্কা করছি এ ধরনের আবেদন দীর্ঘ সময় নষ্ট করারই একটি অভিনব কৌশল হয়ে উঠতে পারে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের দিকটি সবকিছুর ওপরে প্রাধান্য পাওয়া জরুরী। তাই কালক্ষেপণ না করে দেশের প্রধান বিমানবন্দরকে জঞ্জালমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে যে কোন মূল্যেই।