ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তাপদগ্ধ দক্ষিণ এশিয়া

-

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২ মে ২০২৪

তাপদগ্ধ দক্ষিণ এশিয়া

সম্পাদকীয়

তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে শুধু যে বাংলাদেশই পড়েছে তা নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়া আক্রান্ত হয়েছে দাবদাহে। বাংলাদেশের চেয়েও অনেক বেশি তাপপ্রবাহের রেকর্ড হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফিলিপিন্স ও মিয়ানমার, যেখানে তাপমাত্রা উঠেছে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

বাংলাদেশের মতো সেসব দেশেও স্বভাবতই জনজীবন হয়েছে বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেতের ফসল ও গবাদিপশুর খামার। লোডশেডিংয়ে উৎপাদন কমেছে শিল্পকারখানায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী, তীব্র ও ঘন ঘন হতে পারে আগামীতেও। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এশিয়া ও প্রশাস্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক বেন চার্চিল জানিয়েছেন, আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থা এল নিনো (উষ্ণ মহাসাগরীয় স্রোত) এবং জলবায়ু পরিবর্তন এই অঞ্চলের তাপমাত্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বিপজ্জনক মাত্রায়। এর পাশাপাশি রয়েছে  দ্রুত নগরায়ণ এবং  ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ। দ্বিতীয়ত, ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াগত পরিবর্তন। 
বর্তমানে সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়লেও ২১ জেলার মানুষ রয়েছেন উচ্চ ঝুঁকিতে। এর ফলে দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে কষ্ট ও বিপদে আছে। তারা প্রচ- গরমের কারণে দৈনন্দিন কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না। কয়েকজনের মৃত্যুর খবরও আছে হিটস্ট্রোকে। তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের বেশি থাকলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার পক্ষ থেকে ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য রেড অ্যালার্ট বা লাল সতর্কতা জারির পরামর্শ রয়েছে।

ভারতসহ কয়েকটি দেশে লাল ও কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে ইতোমধ্যে। বাংলাদেশে ১৯ এপ্রিল থেকে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মাসে দেশব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কালবৈশাখীসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ, অধিক পরিমাণে কালবৈশাখী, বৃষ্টিপাত, সেইসঙ্গে বজ্রপাতের জন্য দায়ী করা হয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের সমূহ ঝুঁকিকে। 
এসব আমলে নিয়ে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে গঠন করেছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। ২০২৩-২০৫০ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নে গ্রহণ করা হয়েছে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাপ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। দেশে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয় ৭১ লাখ মানুষ।

এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে এক কোটি ৩৩ হাজারের বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে উন্নত বিশ্বের তীব্র অনীহা। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

×