ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দূষণ কমাতে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার

আবেদীন পুশকিন

প্রকাশিত: ২১:০৩, ২ মে ২০২৪

দূষণ কমাতে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার

দূষণ কমাতে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার

চায়ের দোকানে ওয়ানটাইম কাপ থেকে শুরু করে অফিসের টেবিলের পানির বোতল! আমাদের নিত্যদিনে বেশিরভাগ জায়গায়ই প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। একদিকে সামুদ্রিক কচ্ছপের নাকে আটকে যাওয়া সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক স্ট্র, অন্যদিকে মাছের শরীর হয়ে আমাদের খাবারের পাতে উঠে আসা মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো উপাদান- সব জায়গাতেই এখন প্লাস্টিক। ব্যক্তিপর্যায় থেকে বহুজাতীয় শিল্পগোষ্ঠী সবাই প্লাস্টিকের ওপর সমানভাবে নির্ভরশীল। দেখা যাচ্ছে বিশ্বের ৫৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে মাত্র ২০টি শিল্পগোষ্ঠী।
প্লাস্টিকের ওপর নির্ভরশীল সকলেই এই দূষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন- শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। অথচ প্লাস্টিকের দূষণ রোধ বা পুনর্ব্যবহার সেই হারে বাড়ছে না। ফলে প্রকৃতিতে প্লাস্টিক ও এর অপচনশীল উপাদান রয়ে যাচ্ছে। ক্ষেত্রভেদে প্লাস্টিক প্রকৃতিতে পুরোপুরি মিশে যেতে ১ হাজার বছরেরও বেশি সময় লাগে। ২০১৯ সালে বিশ্বে ৩৭০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয়, যার মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয় ও ১২ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়, বাকিটুকু প্রকৃতি ও ল্যান্ডফিলে রয়ে যায়।  
এসব অপচনশীল প্লাস্টিক দূষণের কারণে নদী-সমুদ্রসহ সকল জলাধারের বাস্তুসংস্থান ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া প্লাস্টিক জমির উর্বরতাও নষ্ট করছে। কিছু অংশ ফল ও সবজির সঙ্গে মিশে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে আমাদের খাবারের প্লেটে উঠে আসছে। প্লাস্টিকের কারণে পানি ও বায়ুর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, প্লাস্টিক উৎপাদন ও পুড়িয়ে ফেলার সময় নিঃসরিত গ্যাস বায়ুম-লের ক্ষতি করছে।

আর এসব দূষণের সরাসরি ভুক্তভোগী কেবল মানুষ নয়, বরং সমস্ত প্রাণিকুল। আমাদের জলবায়ুর ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আরও বাস্তব হয়ে ওঠা জলবায়ু বিপর্যয়ের পেছনে যে কারণগুলোকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয় তার একটি বড় জায়গা দখল করে আছে প্লাস্টিক ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত পানি, মাটি ও বায়ুদূষণ।
প্লাস্টিকের বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও কার্যকর করে তোলা সম্ভব। এটি বিবেচনায় রেখে টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্লাস্টিকের বোতলকে গাছ লাগানোর পাত্রে পরিণত করার উদ্যোগ নেয় এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন পিএলসি, যা পরিবেশবান্ধব এবং একই সঙ্গে পরিবেশের নান্দনিকতা রক্ষার এক অনন্য বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সবুজ, সমৃদ্ধ ও টেকসই বাংলাদেশ নিশ্চিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সচেতনতা তৈরিতে এটি অন্যান্য করপোরেট বা শিল্পগোষ্ঠীর জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর এরকম দায়িত্বশীল উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, অন্যদিকে তেমনি জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে, চাইলেই এই দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যক্তি, সম্প্রদায়, প্রতিষ্ঠান বা শিল্পগোষ্ঠী চাইলে যে কেউ প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। এজন্য সবার আগে সচেতনতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।

একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয় এমন চায়ের কাপ, প্লেট, চামচ বা স্ট্র ব্যবহার না করে পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি জিনিস ব্যবহার করতে হবে। বাজার করতে গিয়ে পলিথিনের ব্যাগের বদলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার একটি ভালো উপায় হতে পারে। আবার চিপস বা যে কোনো পণ্যের প্যাকেট, বোতল বা ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য একসঙ্গে রাখা ও জায়গামতো ফেলা উচিত, যেন তা পরবর্তীতে পুনর্ব্যবহার করা যায়।

এখন বিশ্বে যে মাত্রায় প্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কারও একার পক্ষেই তা রোধ করা সম্ভব নয়। এই বিশ্ব, পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি ও জলবায়ুর প্রতি আমাদের সবার অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে। আর এনার্জিপ্যাকের মতো দেশের বাকি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে এই দায়িত্ব পালন করা অনেক সহজ হবে। 

লেখক : পরিবেশকর্মী

×