ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দরিদ্রদের আইনি সহায়তা

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২ মে ২০২৪

দরিদ্রদের আইনি সহায়তা

সম্পাদকীয়

গত রবিবার পালিত হয়েছে আইনগত সহায়তা দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিবাদ্য ছিল- স্মার্ট লিগ্যাল এইড স্মার্ট দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। সমাজের দরিদ্র অসহায় নাগরিকদের আইনগত সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সামাজিক সমতা জড়িত।  দেশের আদালতগুলোতে মামলাজটের বিষয়টি সুবিদিত। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে একজন বিচারপ্রার্থী তথা ভুক্তভোগীর বিচারের রায় পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বিষয়টি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষও। সে অবস্থায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল দরিদ্র ব্যক্তির পক্ষে মামলা চালিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য।

অথচ আইনগত সহায়তা পাওয়া দেশের যে কোনো নাগরিকের জন্য কোনো করুণা নয়, বরং এটি তার অধিকার। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারের প্রতি আগেকার কোনো সরকারই দৃষ্টি দেয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠন করে ২০০০ সালে আইনগত সহায়তা আইন প্রণয়ন করেন। ফলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সমাজের অসচ্ছল ও সহায়সম্বলহীন নাগরিকদের জন্য আইনগত অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

এর মূল উদ্দেশ্য দরিদ্র অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রদান করা। এর মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ১০ লাখ ২২ হাজার ৯৫৮ জন হতদরিদ্র মানুষ আইনের সহায়তা পেয়ে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন ন্যায়বিচার। এজন্য গরিব মানুষের পাশে আছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা বা লিগ্যাল এইড অফিস। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২৭ হাজার ৪২৪ জন। 
এর বাইরে ২০১৫ সালে প্রণয়ন করা হয় আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত বিধান। বাংলাদেশের ৮৭ ভাগ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী। মামলার সঠিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি মামলাজট নিরসনের সহায়ক একটি পন্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। লিগ্যাল এইড অফিসারদের মধ্যস্থতা করার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে লিগ্যাল এইড অফিসারগণ জুলাই ২০১৫ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৮৩৬টি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন। ফলে এখন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিসগুলো মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। 
দেশের উচ্চ আদালতসহ নি¤œ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। কেবল উচ্চ আদালতেই বিচারাধীন (আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ) মামলার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৭টি। এর মধ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয়ই রয়েছে।

এর বাইরেও রয়েছে নিম্ন আদালত- জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অন্যান্য। যেগুলোতে মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫টি। ৪২ লাখ মামলার বিপরীতে উচ্চ এবং নিম্ন আদালতে বিচারকদের সংখ্যা অনেক কম প্রয়োজনের তুলনায়। সে অবস্থায় আইনি সহায়তা প্রদানসহ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। ফলে দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থীরা হচ্ছেন উপকৃত।

×