ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০১:২৩, ৩ মে ২০২৪

ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা

ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা

ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। বিধ্বস্ত গাজায় খাদ্যাভাবে বাড়ছে হাহাকারও। সেখানে ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা প্রদানে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা। সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ, আছে ব্যক্তি উদ্যোগও। বাংলাদেশের সাবেক নারী ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী গত চার মাস ধরে গাজায় আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন। তার সহায়তার অর্থে খাবারসহ প্রয়োজনীয় পোশাক ও শিশুসামগ্রী কিনে গাজার বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষদের জন্য বিতরণ করা হচ্ছে।

 বিথীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন মনে করছে গাজার বিভিন্ন স্থানে মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজার এতিম শিশুসহ অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা চাইছেন আরিফা জাহান বিথী। ইতোমধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে তিন বারসহ গত চার মাসে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে গাজার নিপীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ক্রিকেটার বিথীকে ধন্যবাদ বার্তা জানিয়েছে গাজার শিশুরা।  
উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রংপুরের নূরপুরে বেড়ে উঠেছেন আরিফা জাহান বিথী। ৪ ভাই বোনের দরিদ্র সংসারে উপার্জনের হাতিয়ার ছিলেন বাবা। তিনি চাকরি করতেন একটি পেট্রল পা¤েপ। জটিল রোগে আক্রান্ত হলে বাবাকে সেই চাকরি ছাড়তে হয়। অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে মিলে বাসার পাশে একটি মুদির দোকান দেন বিথী। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাঠ সেরেছেন। ডিগ্রিতে পড়েছেন রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজে।

পড়াশোনার পাশাপাশি অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয় বিথীকে। কিন্তু বিথীর ঝোঁকটা ছিল অন্যদিকে। খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেট তাকে খুব করে টানত। স্কুলের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতেছেন পুরস্কার। ক্রিকেটে ছিলেন বেশ পারদর্শী। বাংলাদেশের ফার্স্ট ডিভিশনে খেলেছেন একাধিক লীগেও। কিন্তু নাকের সমস্যার কারণে খেলা থেকে অবসর নিতে হয়। তবে এখন নিজে খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে না নামলেও কোচিং করা মেয়েদের। রংপুরে গড়ে তুলেছেন দেশের একমাত্র নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি। 
আরিফা জাহান বিথী জানান, মানবিক এই সহায়তা গাজায় পৌঁছে দিতে ফিলিস্তিনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক মিস্টার নাওয়াল এবং বাংলাদেশের মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম তাকে সহযোগিতা করছেন। তাদের মাধ্যমে গত চার মাসে কয়েক দফায় আর্থিক সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে গাজার এতিম শিশু ও বাস্তুচ্যুত অসহায় মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে রান্না করে খাবার পরিবেশন, পোশাক ও ওষুধের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবক।

তিনি বলেন, আমি এবং আমার সংগঠন থেকে আমরা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সেই ধারাবাহিকতায় গাজার মানুষের জন্য আমরা এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। গাজার বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে তাঁবুতে জীবনযাপন করছে। তাদের খাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে গাজার মানুষের জন্য এগিয়ে এলে খাদ্য সংকট থেকে অনাহারের ঝুঁকি বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বিথী তার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। চাইলে এই কার্যক্রমে সামর্থ্য অনুযায়ী যে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া কেউ যদি পরিচয় গোপন রাখতে চান, তাও করা হবে। এই উদ্যোগে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে বিকাশ ও নগদ করতে পারেন ০১৮৬৭৫৭৮২৩০ নম্বরে। 
করোনা মহামারির শুরুর দিকে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবার জন্য ফেসবুকে সবার কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিলেন আরিফা জাহান বিথী। তার আহ্বানে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেনসহ অনেকেই সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়ান। করোনাকালীন সময়ে নিজের জমানো টাকা আর অন্যের আর্থিক সহযোগিতার সমন্বয়ে কয়েক হাজার মানুষের দুয়ারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, ফল, দুধ, ডিম ও হরলিকসসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তখন থেকে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা নারীদের সেবামূলক সহায়তা দিয়ে আসছেন তিনি। এরপর থেকে সামাজিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন এই নারী ক্রিকেটার।
এদিকে প্রচ- তাপদাহের সময় সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর সংলগ্ন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ২ শতাধিক রিকশাচালকের মাঝে গরম সহনীয় ক্যাপ ও ছাতা বিতরণ করে ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথীর প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। এ সময় সংগঠনের সদস্যরা রিকশার সামনে লাঠি বেঁধে চালকের মাথার ওপর ছাতা ঝুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চালকদের ক্যাপ পরিয়ে দেন। ইতোমধ্যে গত সাড়ে তিন বছরে শতাধিকের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন বিথী।

গৃহহীন বৃদ্ধা মা-বাবাকে দিয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন শরীফও বিতরণ করেছেন বিথী। গেল মাহে রমজানে জেলার ছয় হাজার রোজাদার অসহায় ব্যক্তিকে ইফতার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন সাবেক এই নারী ক্রিকেটার।

×