ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় সৈয়দ শামসুল হক

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিদায় সৈয়দ শামসুল হক

চলে গেলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। কিছুদিন থেকে ভুগছিলেন ফুসফুসের দুরারোগ্য ক্যান্সারে। যৌবনে একদা আক্রান্ত হয়েছিলেন টিবিতে। তবে তাঁর ছিল অদম্য অনমনীয় মনোবল, প্রচ- ইচ্ছাশক্তি, সর্বোপরি জীবন ও জগতের প্রতি তীব্র ভালবাসা। আকণ্ঠ আপ্লুত হয়েছেন তাঁর অগণিত ভক্ত পাঠকসহ সর্বস্তরের মানুষের অপার ভালবাসায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও গিয়েছিলেন। সেখানে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা তাঁর জীবনের আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলেন। বিদেশ-বিভূঁইয়ে প্রায় অজানা-অচেনা-নির্বান্ধব পরিবেশে না থেকে প্রিয় জন্মভূমি, মাতৃভূমিতে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি প্রগাঢ় আবেগ ও আনুগত্য, সর্বোপরি মানুষের ভালবাসা ও সশ্রদ্ধ আহ্বানকে উপেক্ষা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ফিরে এসেছিলেন অন্তিম গন্তব্য বাংলাদেশে। মূলত প্রচ- রকমের আশাবাদী ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। কেননা তিনি তো শেষ পর্যন্ত একজন কবি ও লেখক, যিনি সতত সৃজনশীল ও ব্যাপৃত কবিতা ও গানে, গল্প ও উপন্যাসে, নাটকে ও গীতিনাট্যে, তদুপরি বিচিত্র প্রবন্ধমালা ও স্মৃতিচারণায়। রাজধানীর একটি হাসপাতালে অন্তিম শয্যায় আশ্রিত থেকেও রচনা করেছেন কবিতা ও গান। মৃত্যুর আগে হাত দিয়েছিলেন চিরকালের অমর লেখক শেক্সপিয়ারের অনবদ্য সৃষ্টি ম্যাকবেথের বাংলা নাট্য রূপান্তরে। হাসপাতালে লিখেছেন ১০০টির অধিক কবিতা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক লিখতে শুরু করেছিলেন ইংরেজীতে ‘এ সার্চ ফর বঙ্গবন্ধু’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ৭০তম জন্মদিন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল তাঁকে। হন্তারক ব্যাধি সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়লেও কবিচেতনা ছিল সক্রিয় ও সচেতন। মূলত মৃত্যু তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি কখনই। আর তাই শারীরিক মৃত্যু ঘটলেও একজন কবি ও লেখক হিসেবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি অবিনশ্বর, চিরস্মরণীয়। নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে স্মরণ করে বলা যায়, মৃত্যু হলেও মানুষের পরাজয় ঘটে না। কবির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। নিঃসন্দেহে একজন কবির জীবনে এ এক দুর্লভ প্রাপ্তি, সম্মান ও শ্রদ্ধার্ঘ্য। বাংলাদেশ ছিল সৈয়দ শামসুল হকের চিরপ্রেরণা ও চেতনার উৎস ভূমি। কবিতার কলকাকলীতে, সঙ্গীতের ধ্বনি মাধুর্যে, নাটকের আলোআঁধারি মঞ্চে, গল্প-উপন্যাসে তিনি সর্বদাই সাধারণ মানুষের কথা লিখেছেন। বলেছেন তাদের সংগ্রাম ও স্বপ্নের কথা, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছে সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন। আমরা সৈয়দ হকের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। কবির পরিবার ও স্বজনদের জানাই গভীর সমবেদনা। বিদায় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
×