বাজারে গরুর মাংসের দাম এখন চড়া। হঠাৎ করেই যেন এই অস্থিরতা। দাম বাড়ছে হু হু করে। ৩৮০ টাকার মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়। দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া না হলে রমজান মাসে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে মাংসের এই বাজারটি। দাম বাড়ার এই প্রভাব পড়বে মুরগি ও খাসির মাংসের দামেও। এতে মাংসের বাজারে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। বিক্রেতাদের দাবি, আমাদের দেশে গরু আমদানি মূলত হয়ে থাকে ভারত থেকে। সীমান্ত কড়াকড়ির কারণে এখন ভারত থেকে গরু আসার হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। যেসব গরু আসছে তাতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হচ্ছে। একথা সত্য যে, ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ পথে গরুর সরবরাহ কমেছে। এতে দেশে মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ অন্য আরেকটি কারণের কথাও উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে দাম বৃদ্ধির কারণ চামড়ার দাম না পাওয়া। তিন হাজার টাকার চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে এক হাজার থেকে বারো শ’ টাকায়। চামড়ার লোকসানের এই ক্ষতি মাংসের দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। দেশে আমিষের গুরুত্বপূর্ণ যোগানটি আসে গরুর মাংস থেকে। ফলে এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য খাতে। তাই মাংসের মূল্য পুনঃনির্ধারণে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিতে হবে।
সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই দেশেই আমিষের অন্যতম যোগানদাতা গরুর মাংসের প্রয়োজনীয় উৎপাদন সম্ভব। এতে দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। দেশের গরু খামারিরাও ন্যায্য দাম পাবেন। আমিষ খাদ্য সবার কাছে সুলভ করতে হলে আরও বেশি করে গরু-ছাগলের খামার গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এই প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে গরু-ছাগলের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানো যায়। প্রাণিজ আমিষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো পোল্ট্রি শিল্প। এই শিল্পটি দারুণভাবে বিকশিত হলেও এক সময় প্রাকৃতিক দুর্বিপাক, বিশেষত বার্ড-ফ্লু আতঙ্কে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্ধ অনেক খামার। তারপরও আমিষ যোগানে পোল্ট্রির অবদান এখনও ব্যাপক। তাই গরু-ছাগলের খামারের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ পোল্ট্রি শিল্পকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
আমাদের জাতীয় আয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অবদান শতকরা প্রায় ৮ ভাগ। এই পরিসংখ্যানটি কম ইতিবাচক নয়। তাই এই খাতটি অবহেলিত হোক তা কারও প্রত্যাশিত নয়। কয়েক বছর যাবত আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধানসহ কৃষিজ পণ্য উৎপাদন হালে এতটাই বেড়েছে যে, আমরা এখন এসব পণ্য রফতানিও করছি। তাই প্রাণিজ আমিষে স্বনির্ভরতা অর্জন অসম্ভব কিছু নয়। দেশের লোকসংখ্যা এখন ১৬ কোটি। জনসংখ্যার চাপে দেশের আবাদযোগ্য জমি কমেছে কয়েকগুণ। তা সত্ত্বেও আমরা খাদ্যে স্বাবলম্বী। তাহলে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে কেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব না? এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে এখন ২ সহস্রাধিক পশু চিকিৎসক বেকার। তার মানে এই খাতটি অনেকটা অবহেলিত। তাই সরকারী-বেসরকারী প্রচেষ্টায় গরুসহ প্রাণিজ খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এই খাতে বেকারত্বেরও হারও কমবে। এজন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এই খাতকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা জরুরী।