নতুন বছরের প্রথম দিন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফলতা দেখিয়ে আসছে। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকরাও এতে আনন্দিত। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য জ্ঞান তথা শিক্ষার বিকল্প নেই। সেজন্য যে কয়টি শর্ত পূরণ জরুরী তার ভেতর রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠে উদ্বুদ্ধ করা এবং সময়মতো তাদের শিক্ষা উপকরণ তোলা দেয়া। ধারাবাহিকভাবে বছরের প্রথম দিন তাদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়ার মতো দুরূহ কাজটি এবারও সুসম্পন্ন হওয়ায় সবাই স্বস্তিবোধ করছে। এ বছর সারাদেশে মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২ কপি বই বিতরণ করা হচ্ছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্ধারিত কয়েকটি ক্যাটাগরির কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক নতুন ও অর্ধেক পুরনো পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়া হতো। তবে এসব বই সময়মতো শিক্ষার্থীরা পেত না। বই পেতে পেতে মার্চ-এপ্রিল পার হয়ে যেত। এতে ক্লাস শুরু হতেও দেরি হতো। সময়মতো বই না পাওয়ায় প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ত। পরবর্তীকালে ঝরে পড়া রোধ, শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনা, দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আওতায় আনতে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবই বিনামূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি ১ জানুয়ারি ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ পালনের উদ্যোগ নেয়। এতে সুফল মিলেছে। কমেছে ঝরে পড়ার হার। বেড়েছে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অন্তর্ভুক্তির হারও।
গত বছর হরতাল উপেক্ষা করে দেশজুড়ে হয়েছিল কোটি কোটি পাঠ্যবই বিতরণের অন্যরকম এক উৎসব। শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে, বেলুন আর কাঠির মাথায় বাঁধা রঙিন ফিতা উড়িয়ে শামিল হয় এ উৎসবে। নতুন বই বুকে জড়িয়ে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থীরা। এ উৎসব চলে সপ্তাহজুড়ে। এবার বছরের প্রথম দিন শুক্রবার ছুটির দিন হলেও এদিনই যথারীতি হয়েছে বই উৎসব। ‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে ফুলের মতো ফুটব, বর্ণমালার গরব নিয়ে আকাশজুড়ে উঠব’Ñ এই সেøাগানকে সামনে রেখে শুরু হয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস।
এদিকে প্রাথমিক ও জুনিয়র স্তরে পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আবেগ, আনন্দ ও উচ্ছ্বাস কাজ করে অভিভাবকদের মাঝে। এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর মতো জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীরা আশাতীত ফল করেছে। ফলে বছরের শেষ দিন দেশজুড়েই উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফল ও অংশগ্রহণসহ সবদিক থেকেই ছাত্রদের চেয়ে এবার ছাত্রীরা এগিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। সর্বাধিক ভাল ফল এসেছে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীতে। এবার এ পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীর ফলও আগের বছরের চেয়ে ভাল। এখন নির্দি¦ধায় বলা যেতে পারে যে, দেশে শিশু-কিশোরদের শিক্ষার্জনে নতুন উদ্যম ও প্রেরণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হবে।