
প্রধান উপদেষ্টার কাছে গুম কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে গত ৪ জুন। প্রতিবেদনে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই কথা জানান।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন এই প্রতিবেদনে প্রায় ১৮৫০ অভিযোগ বিশ্লেষণের মধ্যে থেকে ২৫৩ জন গুমের শিকার ব্যক্তির তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে যাদের ৩টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে- ১. নিখোঁজ হওয়ার সময়ে তাদের নিকটাত্মীয়ের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি, ফৌজদারি মামলা, গুম থাকাবস্থায় সংবাদ প্রতিবেদনের মতো সমসাময়িক প্রমাণ রয়েছে। শুধুমাত্র এই ২৫৩ জন সমসাময়িক প্রমাণ দাখিল করতে সক্ষম হয়েছেন, বাকিরা হননি কারণ তখন এসব ক্ষেত্রে জিডি করতে গেলে জিডি নেওয়া হতো না। ২. গুম অবস্থা থেকে ফেরতের সময় তাদের সন্ত্রাসবিরোধী মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোনো একটি সংস্থা শিকার করে নেয় যে, ব্যক্তিটি তাদের হেফাজতে আছে। ৩. এই ভুক্তভোগীরা জীবিত আছেন তাই তারা কমিশনকে জানাতে পেরেছেন যে তারা রাষ্ট্রীয় হেফাজতে গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি ছিলেন, যেখানে তাদের অনেকের একে অপরের সঙ্গে দেখাও হয়েছে এবং একই ধরনের নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন।
তিনি জানান, যে বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে "জঙ্গিবাদবিরোধী" অভিযানের ছায়াতলে ইসলামী উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে যার ভুক্তভোগী ছিল মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পেশাজীবী তথা সাধারণ জনগণ।
সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘গুমের ঘটনায় র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই-এর কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন—এগুলো এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে সেনা সদস্যরাই মূলত নেতৃত্বে থাকেন। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব সংস্থার মাধ্যমে অনেক গুম সংঘটিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী জড়িত ছিল না, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে জানতেন না, এমনটা বলা যাবে না।’
মইনুল ইসলাম বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করেছে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে, এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দিয়েছে।
সানজানা