ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ঢুকছে শত শত গরু, কিন্তু কীভাবে?

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৬ মে ২০২৫

মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ঢুকছে শত শত গরু, কিন্তু কীভাবে?

ছবি: সংগৃহীত।

কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অবাধে প্রবেশ করছে মিয়ানমার থেকে আসা শত শত গরু ও মহিষ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গভীর রাতে কিংবা দিনদুপুরে এভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে চোরাই পশু। স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে একটি সুসংগঠিত চোরাচালান চক্রের নিয়ন্ত্রণে।

সরাসরি সীমান্তবর্তী গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির মধ্যবর্তী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি গরু চলছে। মুখ ঢাকা কিছু ব্যক্তি এই গরু গুলোকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কেউবা হেঁটে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। এসব গরু পরে ট্রাকে তোলা হচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "গরুগুলোর হিসাব রাখে আলাদা লোক। গণনা করে প্রতি গরুতে নির্দিষ্ট টাকার চাঁদা আদায় করা হয়। বিজিবি সদস্যদের ম্যানেজ করে এসব গরু দেশের ভেতরে আনা হয়।" তিনি আরও বলেন, "একটা রাতেই যদি কয়েকশ গরু ঢোকে, তাহলে কারবারির লাভের অঙ্ক সহজেই অনুমেয়।"

স্থানীয়দের অভিযোগ, চোরাচালান ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।

এদিকে সীমান্তে অবস্থানরত এক বিজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি গরু চোরাচালানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "গত কয়েক বছরের তুলনায় চোরাচালান কমলেও কারবারিরা নতুন নতুন রুট তৈরি করছে। আমাদের লোকবল সংকটও রয়েছে। অনেক সময় আমরা জানতে পারি গরু চলে যাওয়ার পরে।"

অবৈধ পশু প্রবেশের কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় বাজারে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার থেকে আসা এসব গরু তুলনামূলকভাবে সস্তায় কিনে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সীমান্তবর্তী বাজারে গরুর হাটের ইজারার দর হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে। গর্জনিয়া বাজারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আড়াই কোটি টাকা থেকে নিলামের ডাক গিয়ে ঠেকেছে ২৬ কোটি টাকায়।

এছাড়া গরু ও ইয়াবা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে নাইক্ষ্যংছড়ির গোরচুনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাওয়ারকুপ এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক সশস্ত্র বাহিনী। এসব গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করছে।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব চোরাচালান আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সময় এসেছে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।

নুসরাত

×