
ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে এসে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তিনি আন্দোলনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর পাশাপাশি জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, "আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংকট নিরসনে সরকারের একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।" তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে এ বক্তব্য তুলে ধরেন।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম দফা দাবির প্রেক্ষিতে বাজেট বাড়ানোর নির্দেশনা এসেছে এবং অস্থায়ীভাবে আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।”
শুক্রবার বিকেল থেকে টানা তৃতীয় দিনের মতো গণঅনশন শুরু করে জবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় জবি শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমন এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাকরাইল মসজিদের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন এবং জবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুর রহমান হামিদ। তারা বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাস থেকে অন্তত ৫০টি বাস রোটেশন ভিত্তিতে আন্দোলনস্থলে পৌঁছে দেয়। পরিবহন প্রশাসক তারেক বিন আতিক জানান, ড্রাইভার সংকট ও অসুস্থতার মধ্যেও বারবার বাস চালিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাকরাইলে আনা হয়।
তিন দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, লাঠিপেটা করা হয়েছে, এমনকি ‘ট্যাগ’ দিয়ে হেয় করা হয়েছে। জবি শিক্ষার্থী তামিম বলেন, “এই দাবি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত নয়, এটা জবির প্রতিটি শিক্ষার্থীর দাবি। দাবি আদায় না করে আমরা ফিরছি না।”
সমাবেশে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে কাকরাইল মোড়। “ইউজিসির কালো হাত ভেঙে দাও”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “১, ২, ৩, ৪ ক্যাম্পাস আমার অধিকার”—এসব স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। উপস্থিত ছিলেন সাবেক-বর্তমান প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবে অবহেলিত ও বঞ্চিত। আমরা দল-মত নির্বিশেষে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে। এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের রক্তের বিনিময়ে গড়া এই সরকারের যদি হুমকি ও দমননীতির মাধ্যমে আমাদের দাবিকে দমন করার চেষ্টা থাকে, তাহলে আন্দোলন শুধু কাকরাইলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “তিন দিন ধরে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে অনশন করছে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আসেনি। প্রথম দিনেই এই সমস্যার সমাধান করা যেত।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জবির সাবেক শিক্ষার্থী ও পল্টন থানা জামায়াতের আমির শাহীন আহমেদ খান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান, নতুবা আন্দোলন আরও জোরদার করার হুঁশিয়ারি দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, সরকার জনগণের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করছে। তবে তারা স্পষ্ট জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।
ফারুক