
শাম্মী ও সাদিক আব্দুল্লাহ
উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছেন বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ফলে শাম্মী আহমেদ ও সাদিক আবদুল্লাহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া আদালত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। আবার কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলও করেছেন। এ ছাড়া ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
অন্যদিকে আদালতে মামাত-ফুফাত ভাইবোনের আইনি লড়াই শেষ হয়েছে। এখন ভোটের লড়াই শুরু হবে। গাজীপুর-৪ আসনের (কাপাসিয়া) স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। এ দুই প্রার্থী সম্পর্কে মামাত-ফুফাত ভাইবোন। এ ছাড়া নোয়াখালী-১ আসনে রুহুল আমিন, ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউন্সিলর মানিক নির্বাচন করতে পারবেন না। সিলেট-২ আসনে মুহিবুর ও খুলনা-৫ আসনে শেখ আকরামের প্রার্থিতা বহাল রাখা হয়েছে।
ভোট করতে পারবেন না সাদিক-শাম্মী ॥ বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের করা আপিল (লিভ টু আপিল) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই আদালত বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতার বিষয়ে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে শাম্মী আহমেদ ও সাদিক আবদুল্লাহও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। আদালতে শাম্মী আহমেদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান ও নাহিদ সুলতানা যুথি। এর আগে বরিশাল-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেছিলেন। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজের।
এদিকে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক। ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানি শেষে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সাদিক আবদুল্লাহ। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর মনোয়নপত্র বৈধতা পায়।
এর পরদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন জাহিদ ফারুক। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর নির্বাচন আটকে যায়। মঙ্গলবার আপিল বিভাগে শুনানি শেষে আদালত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতার বিষয়ে চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে সাদিক আবদুল্লাহও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের শুনানি এক সপ্তাহ পর ॥ ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে শুনানি এক সপ্তাহ পর হবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে নির্বাচনের পর এ বিষয়ে শুনানি হবে। এ কে আজাদের পক্ষে আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ ‘নট দিস উইক’ (শুনানি এ সপ্তাহে নয়) এ আদেশ দেন। আদালতে এ কে আজাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানজীব উল আলম।
দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদ। শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এরপর শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর আপিল মঞ্জুর করে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় ইসি। তার বিরুদ্ধে রিট করেন শামীম হক। ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।
পরে ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে শামীম হক আবেদন করেন। ওই দিন চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। এরপর এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এ কে আজাদ।
সিমিনের আবেদন খারিজ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনে বাধা নেই ॥ গাজীপুর-৪ আসনের (কাপাসিয়া) স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। শুনানির জন্য নির্ধারিত দিন মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বুধবার চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ দিন ধার্য করেন। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সেটির শুনানি হয়। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. ইয়াদনান রফিক ও সাফওয়ান করিম। আলম আহমেদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও আইনজীবী মনিরুজ্জামান আসাদ। সিমিন হোসেন রিমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে। তিনি তাজউদ্দীনের ছোট বোন মরিয়ম হেলালের ছেলে। এ দুই প্রার্থী সম্পর্কে মামাত-ফুফাত ভাইবোন।
রুহুল আমিন নির্বাচন করতে পারবেন না ॥ নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ রুহুল আমিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আদালতে রুহুল আমিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও এবিএম আলতাফ হোসেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া ও ইমাম হাছান। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার রুহুল আমিন।
কাউন্সিলর মানিক নির্বাচন করতে পারবেন না ॥ ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিককে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে এবং প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না। তার প্রার্থিতার বিরুদ্ধে ওই আসনে জাসদের প্রার্থী হাজি ইদ্রিস বেপারির করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঋণখেলাপির কারণে তার মনোনয়নপত্র ৪ ডিসেম্বর বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সিলেট-২ আসনে মুহিবুরের প্রার্থিতা বহাল ॥ সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি এবং প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও এক প্রার্থীর করা আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ না করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে গত ৪ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
শেখ আকরামের প্রার্থিতা বহাল ॥ খুলনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের আবেদন খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তার প্রার্থিতা ফেরত দিয়ে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে তার প্রার্থিতা বহাল রয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে শেখ আকরাম হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। ঋণখেলাপির অভিযোগে খুলনা রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়ন বাতিল করেন। আপিলের পর নির্বাচন কমিশন নামঞ্জুর করেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
আব্দুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বহাল ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন চেম্বার আদালত।
একই সঙ্গে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দেন আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। গত ২০ ডিসেম্বর দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।