ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

জলবায়ু সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে সমঝোতার চেষ্টা

কাওসার রহমান, দুবাই থেকে

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

জলবায়ু সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে সমঝোতার চেষ্টা

জলবায়ু সম্মেলনে শেষ মুহূর্তে সমঝোতার চেষ্টা

জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ বা কমিয়ে আনার প্রশ্নে দুবাই জলবায়ু আলোচনায় এক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এই অচলাবস্থা নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যা”েচ্ছন সম্মেলনের সভাপতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশ মন্ত্রী সুলতান আর জাবের। তিনি যে কোনো মূল্যে দেশগুলোকে নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছে দুবাইকে জলবায়ু সম্মেলনের ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন। এ লক্ষে সম্মেলনের (কপ) সভাপতি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে দফায় দফায় ‘মজলিশ’ করে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। 
আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে বহুল আলোচিত এবং প্রথম দিনে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সম্মেলন। উদ্বোধনের দিনেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলকে কার্যকর করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সামিট শেষ দিনে চূড়ান্ত চুক্তিতে বিশ^বাসীকে কি উপহার দেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় অধীর বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। 
দুবাই জলবায়ু আলোচনা সোমবার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। সেই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রও ছোট হয়ে এসেছে। এখন কেবলমাত্র দুটি ইস্যু সামনে আছে। একটি হচ্ছে, জলবায়ু প্রশমনে বৈশি^ক কার্বন নির্র্গমন কমানোর উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জলবায়ু সংকট উত্তরণে দেশগুলোর সদিচ্ছা প্রকাশ। 

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টিয়েল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবাইয়ে একটি অর্থবহ চুক্তিতে উপনীত হতে হলে আমাদের বাধা সৃষ্টির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। বৈশি^ক মূল্যায়ন (গ্লোবাল স্টকটেক) অনুমোদনে সকল দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে হারজিতের কিছু নেই। আমি জিতব, আপনি হারবেন- এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এখানে একজনের পরাজয় মানে সকলের ব্যর্থতা। যা বিশে^র ৮০০ কোটি মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তাই আলোচনার টেবিলে প্রত্যেককে পুরস্কারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সকল দেশের লক্ষ্য হতে হবে বিশে^র সকল মানুষের মঙ্গলের জন্য চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়া।’
জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে এসে সব পক্ষকে সন্তুষ্ট করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন কাজ। তাই শেষ দিনের কাজকে সহজ করার জন্য দুদিন আগে থেকেই ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ শুরু করেছেন কপ সভাপতি সুলতান আল জাবের। রবিবার থেকে তিনি গ্রুপে গ্রুপে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। আরবি ভাষায় যাকে ‘মজলিশ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই মজলিশগুলোতেই তিনি বিভিন্ন দেশের ও প্রতিনিধিদের তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি প্রতিনিধিদের সমঝোতার মানসিকতা নিয়ে চূড়ান্ত সামিটে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 
এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘আমি চাই প্রত্যেক দেশ চূড়ান্ত সামিটে সমাধানের প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। আমি প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধিদের বলব, আপনারা কোনো বিবৃতি নিয়ে আসবেন না। আপনারা আসবেন সমঝোতার প্রস্তুতি নিয়ে।’
তিনি দেশগুলোর মন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেছেন, ‘আমাদের উচ্চমাত্রায় কার্বন নির্গমন কমানোর ব্যাপারে অবশই পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আমাদের চূড়ান্ত চুক্তি অনুমোদন করতে হবে।’ 
জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসে সোমবার পুনরায় দুবাইতে ফিরে এসেছেন। দুবাই ফিরে এসেই তিনি ‘জীবাশ্ম জ¦ালানি যুগের’ সমাপ্তি টানার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা জলবায়ু সম্মেলনের দ্বারপ্রান্তে বসে আছি। তাই দুবাই জলবায়ু সম্মেলনই হতে হবে আমাদের টার্নিং পয়েন্ট। আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি জরুরি আবেদন জানাচ্ছি, ‘আপনারা বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখুন, জীবাশ্ম জ¦ালানি যুগের সমাপ্তি টানুন এবং জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করুন।’ এ সময় তিনি জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত আলোচনায় সমঝোতার মানসিকতা নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশ^নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। 
কি আছে দুবাই জলবায়ু প্যাকেজে ॥ লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড কার্যকর, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রযুক্তির বিকাশ ঘটনো, অভিযোজন কার্যক্রম দ্রুততর করার জন্য গ্লোবাল গোল অপ এডাপটেশন গ্রহণ, মিথেন গ্যাস নির্গমন কমিয়ে বৈশি^ক ক্ষুধা নিবারণে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন, কার্বন নির্গমন কমাতে ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন মিটিগেশন গ্রহণ, বৈশি^ক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাঁচসালা পরিকল্পনা গ্রহণ, ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন এবং ২০২৫ সাল থেকে নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ। মূলত জলবায়ু সংকট নিরসনে সব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেই সাজানো হয়েছে দুবাই জলবায়ু প্যাকেজ।   
পরবর্তী কপ আজারবাইজানে ॥ আগামী বাছরের ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন পূর্ব ইউরোপের দেশ আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা ইউএনএফসিসিসি আজারবাইজানকে আগামী বছরের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচিত করেছে।

×