
.
দফায় দফায় খুচরা বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পণ্যের দাম নির্ধারণের পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। ফলে চড়া দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ নিয়ে যেমন ভোক্তাদের ক্ষোভ বাড়ছে একইভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, লোক দেখানো অভিযানে খুচরা বিক্রেতাদের নাজুক অবস্থা। অন্যদিকে যারা নিত্যপ্রয়োজনীর দ্রব্যের আমদানিকারক ও পাইকার তারাই মূলত দামের কারসাজি করছেন। রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাজার স্থিতিশীল রাখতে আলু, দেশী পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি পিস ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাজারে এখনো এ তিনটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও হালিপ্রতি চার টাকা বেশি দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে আলু ও দেশী পেঁয়াজ।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশী পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা বেশিতে। গত সপ্তাহে এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ টাকা। তবে আলুর কেজি এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৫ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল সর্বনি¤œ ৫০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বাড়তি দামের জন্য ছোট ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিস কেজিপ্রতি ২-৫ টাকার বেশি লাভ করার সুযোগ কম। কারণ বাজারেও প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম বেশি। আবার প্রতি মুহূর্তে বাজার দর ওঠানামা করছে। এর ফলেই মূলত বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে খুচরা বাজারেও স্বস্তি আসত।
বাজার করতে আসা ক্রেতারা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল্য যদি মানা না হয় তাহলে মূল্য বেঁধে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। সবজি-মাছ-মাংস এমনকি সব ধরনের মসলার দাম যেভাবে বেড়েছে তার জন্য সাধারণ মানুষের বাজারে গেলেই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কিছু করার নেই, কিনতেই হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে দাম বেশি ॥ বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। তবে এসব সবজি কিনতে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। গত সপ্তাহের চেয়ে এই সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়েছে। শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, মূলা ৬০-৭০ টাকা ও টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০-৭০ টাকা, স্থানভেদে বেশিও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউয়ের দামও চড়া। তবে কিছু সবজির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমার কথাও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এছাড়া বাজারে চায়না গাজর ১২০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭৫ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৯০ টাকা এবং কচুর লতি ৮০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা ও কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ডাল ১৩০, মোটা মসুর ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০, খেসারি ডাল ৮০, বুটের ডাল ৯০, ছোলা ৭৫, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫, চিনি ১৩৫, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ মাংসের দাম রয়েছে আগের মতোই ॥ ঢাকার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মাছ কিনতে ক্রেতাকে কমপক্ষে ২২০-২৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কারণ পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। মাঝারি তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৮০ টাকায়। এক কেজির রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই-কাতলার মাছের দাম প্রতি কেজি ৩৭৫ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থানভেদে শোল মাছ প্রতি কেজি ৫৫০-৬৫০ টাকা এবং শিং মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৬৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিংড়ির সর্বনি¤œ দাম ৬০০ টাকা প্রতি কেজি। বড় চিংড়ি হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে সপ্তাহ ব্যবধানে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১৯০-২০০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হলেও শুক্রবার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় নেমেছে। এছাড়া লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ৩৪০-৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। গরুর মাংস ৭৭০- ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০-৮০ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৫৫-৬০ টাকা, মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৭০-৮৫ টাকা, বাসমতি চাল ৮৯-৯০ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১২০-১৫০ টাকা, কাটারি ৮০-৯০ টাকা, আমন ৬৫ টাকা, আউশ ৭৫ টাকা ও জিরাশাইল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।