ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে’

সংসদ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘বিএনপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে’

সংসদ। ফাইল ফটো

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে একটি চিহ্নিত অপশক্তি নানা মিথ্যাচার ও গুজব রটিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। 

তারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু মিথ্যাচার করে দেশের জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। 

অপরদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা দেশের ব্যাপক উন্নয়নের কথা স্বীকার করলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনা রোধে সরকারের কার্যকর ভূমিকা না রাখার সমালোচনা করেছেন। 

প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকার, কাজী নাবিল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন খান, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কাজিম উদ্দিন, কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার আনিসুর ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম ও নাজমা আক্তার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এরা দেশের স্বাধীনতাকে এখনও মেনে নিতে পারেনি বলেই মিথ্যাচার করে স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য রাখতে দুঃসাহস দেখাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ বিএনপি নেতা গয়েশ্বর বলে স্বাধীনতার জন্য নাকি জাতি প্রস্তুত ছিল না। 

আবার মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান আমলই নাকি ভালো ছিলো! জাতির প্রশ্ন তাঁর কাছে- বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের কোন জিনিস ভালো তা বলতে হবে। এই অপশক্তিরা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকি দেয়। পবিত্র ধর্মের নামে অপপ্রচার চালিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার ও গুজবে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানা অপপ্রচারের সিংহভাগই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে দেশের একটি চিহ্নিত মহল এখন বইয়ের ওপর সওয়ার হয়েছে। 

বিভিন্ন লেখা এডিট করে, ফটোশপ করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদসহ লেখকদের কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে, হুমকি দেয়া হচ্ছে। সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে এই চিহ্নিত মহল এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কখনও ইসলাম এব সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজ করেনি, করবেও না। তাই দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ, বইগুলো ভালোভাবে পড়ে মন্তব্য করুন, মিথ্যা অপপ্রচারে কান দেবেন না।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের অনেক উন্নয়ন হলেও নানা খাতের অসঙ্গতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অর্থ পাচারের ঘটনা সেসব অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে অনেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, ঋণখেলাপীর সংখ্যা বাড়ছেই। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। আর এসব পাচার হওয়া অধিকাংশ অর্থই হচ্ছে অসদুপায়ে অর্জিত। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবেলার প্রকৃত চিত্র সংসদে তুলে ধরে বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে আমরা ভ্যাকসিন ক্রয় করে ৩৬ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে দিয়েছি। আমাদের দেশে অধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হলো করোনায় এখানে আক্রান্ত প্রতি ১০ লাখে মাত্র ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ লাখে আড়াই হাজার এবং যুক্তরাজ্যে সাতাশ’ মানুষ মারা গেছে। বিএনপির নেতারা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথা বলেছিল যে আমরা গঙ্গার জল নিয়ে এসেছি। কিন্তু তাঁরাই লাইন দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে। তারা শুধু সমালোচনা করতেই জানে, দেশের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায় না।

জাপার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গত ১৪ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। দেশে বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ থাকলেও এখন কেন অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিচ্ছে? কেন আইএমএফের কথা চলতে হচ্ছে? রিজার্ভ যেভাবে কমছে তাতে ভবিষ্যতে আরও সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে তাদের রেমিটেন্স সহজভাবে পাঠাতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশ এগিয়ে গেলে নানা অনিয়মের কারণে দেশে ধনী ও গরীবের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আদর্শের আওয়ামী লীগ হায়ার করা হাইব্রিড নেতার তলায় ডুবে যেতে বসেছে। আকাশে মেঘ দেখলে এসব হাইব্রিডরা সব ফেলে বিদেশে পালিয়ে যাবে। দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। জাতীয় পার্টি কখনো অন্যান্য বিরোধী দলের মতো জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি নয়, শান্তির রাজনীতিতে বিশ্বাসী।  
 

 

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×