ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্রুনাইয়ের সঙ্গে এক চুক্তি, তিন এমওইউ সই

সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় ॥ বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১৭ অক্টোবর ২০২২

সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় ॥ বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদিন ওয়াদ্দৌলাহ রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান

ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহর বাংলাদেশ সফরে সরাসরি বিমান যোগাযোগ, জনশক্তি রপ্তানি, তরলীকৃত গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে ১টি চুক্তি ও ৩টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। বৈঠকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্রুনাইয়ের সুলতানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশকে জ্বালানি বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ব্রুনাই সুলতান।

রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা সফররত ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। আজ সোমবার সকালে তিনি ব্রুনাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সফরের প্রথম দিনে সুলতান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নেন। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন ব্রুনাই সুলতান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আলোচনা করে দুই দেশ। জ্বালানি খাতে বিশেষ করে এলএনজি ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য বাংলাদেশে জোগানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন উপায় খুঁজে বের করার জন্য উভয় নেতা সম্মত হন। দুই নেতার পারস্পরিক আলাপে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত উঠে আসে। বৈঠকে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ব্রুনাইকে আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ব্রুনাইয়ে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রয়োজনীয়তা উভয়পক্ষ স্বীকার করেছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রুনাই তার রাজনৈতিক সমর্থন দেবে যাতে তারা রাখাইনে নিরাপদে ফেরত যেতে পারে এমন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি ॥ দুই নেতার উপস্থিতিতে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের পক্ষে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আব্দুল্লাহ।
বাংলাদেশী জনশক্তি নিয়োগ বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ব্রুনাই। এ সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদিন বিন হাজি আবদুল রহমান সই করেন।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন ব্রুনাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং দেশটির ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আব্দুল্লাহ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি হলো- রিকগনিশন অব সার্টিফিকেট ইস্যুড আন্ডার দ্য প্রভিশন্স অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং, সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচ কিপিং সিফেয়ারস, ১৯৭৮ অ্যাজ অ্যামেন্ডেড। এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী  এবং ব্রুনাইয়ের  পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আব্দুল্লাহ।
এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন বাংলাদেশ সফররত ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
এরপর দুই নেতা একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়েও বৈঠক হয়। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ ব্রুনাইয়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসার আগে ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সেখানে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনাই সফর করেন। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। ব্রুনাইয়ের সুলতানের এটা ফিরতি সফর।    
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ॥ বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সফররত ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশে  ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন এবং এ লক্ষ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
মন্ত্রী জানান, ব্রুনাই সুলতান বাংলাদেশ থেকে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কৃষি ও মৎস্যপণ্য, হালাল মাংস নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জ্বালানির বিষয়ে আলোচনাকালে সুলতান বলকিয়াহ বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও মৎস্য, সেবা প্রদান খাত, আইসিটি, মেরিনসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে অনেক মেধাবী পেশাদার কর্মী রয়েছে। ব্রুনাই চাইলে তাদের নিতে পারে এবং তাদের জনশক্তির চাহিদা মেটাতে পারে।  রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনাকালে শেখ হাসিনা বলেন, এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশে ফেরত যায়নি। রোহিঙ্গাদের নিজেদের মাতৃভূতিতে ফিরে না যাওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলেন ব্রুনাইয়ের সুলতান।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই একত্রে কাজ করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র একে মোমেন বলেন, দুই দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও এক সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন হাসানাল বলকিয়াহ।
আলাপকালে শেখ হাসিনা শুধু পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে না তাকিয়ে পূর্ব এবং আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এ অঞ্চলের দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করলে সবারই উন্নতি হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও একমত পোষণ করেন দুই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

×