ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন

স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুত সরবরাহ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৬ অক্টোবর ২০২২

স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুত সরবরাহ

স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ

দেশের পূর্বাঞ্চলে গ্রিড বিপর্যয়ের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কোথাও স্বাভাবিক হয়নি সরবরাহ। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিড সারাইয়ের কথা বলা হলেও মূলত ফ্রিকোয়েন্সির গরমিল থেকেই গেছে। আর এতে  বিপর্যয়ের পূর্বাবস্থায় যেমন লোডশেডিং ছিল পরে তা দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও তিনগুণ বা চারগুণও হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। দিনে বারবার লোডশেডিংয়ের ফলে শিল্পাঞ্চলগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এমনকি নষ্টও হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লোডশেডিং কমার কথা বলা হলেও সেপ্টেম্বর পার হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি হতে চলল। লোডশেডিং তো কমেইনি বরং প্রতিদিনই বাড়ছে। এমন অবস্থায় লোডশেডিং কমানোর বিষয়ে কোন কথা না বলে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শুধু গ্রিড বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় বিদ্যুত গ্রিড বিপর্যয়ে নাশকতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই চলছে। এখানে অন্যরকম নাশকতা আছে কি না, সেটাও যাচাই-বাছাই চলছে। এটা হচ্ছে একটা বিষয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে অবশ্যই টেকনিক্যাল দিকটাও আমরা দেখছি।’
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে গত মঙ্গলবার আশুগঞ্জ গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ব্ল্যাকআউটের কবলে পরে দেশ। জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের এ অংশে বিপর্যয়ের কারণে এদিন প্রায় অর্ধদিবস বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল ঢাকাসহ সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের সব জেলা। এতে শিল্পোৎপাদন বিঘিœত হওয়াসহ তীব্র গরমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষজনকে। এমনকি সরবরাহ না থাকায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেও হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষের।
এই বিপর্যয়ের বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নসরুল হামিদ জানান, পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণেই বিদ্যুত ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়েই পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে। এতে বিদ্যুত-বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের বিভ্রাট এড়াতে হলে অটোমেশনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের সঞ্চালনব্যবস্থা অনেক পিছিয়ে আছে। আরও আধুনিক ব্যবস্থা করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০১৪ সালের ঘটনাটি ছিল এক রকম। এ ঘটনাটি অন্যরকম। দুটি দুই রকম ঘটনা। ওইখান থেকে যা নেয়ার তার থেকে অনেক দূর পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড) এ্যাডভান্স লেভেলে চলে গেছে। পাওয়ার রিস্টোর করতে মানে কত দ্রুত আনতে পারি, বিভিন্ন উন্নত বিশ্বে কয়েক দিন আগে রেকর্ড আছে, তিন দিন-চার দিন লেগে গেছে কিন্তু আমরা  সেদিকে যাচ্ছি না।’
বিদ্যুত বিপর্যয়ের এ ঘটনা রোধ করার জন্য আপনারা কি করবেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আমরা ঘণ্টাখানেক পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করি। এটা ম্যানুয়ালি করা হয়েছে। এটার বড় জিনিস হচ্ছে আমাদের এখন অটোমেশনে যেতে হবে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। হয়তো আগেই করতে পারতাম। কিন্তু কোভিডের কারণে দুটি বছর পিছিয়ে গেছি। মানে এটা শেষ হতে হয়তো আরও দুই বছর লাগবে। গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে পরিণত করা, এটা একটি বড় বিষয় এ মুহূর্তে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৪ অক্টোবর দুপুর ২টার দিকে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুত উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছিল। এ অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ২৩০ কেভির দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশালের দুটি সার্কিট ট্রিপ করায় পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুত-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণেই বিদ্যুত ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়েই পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিদ্যুত বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়।

×