ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রুদ্ররূপ প্রকৃতির

গ্রীষ্মের অগ্নিবাণে পুড়ছে দেশ, প্রাণ যায় অবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৪ মে ২০১৭

গ্রীষ্মের অগ্নিবাণে পুড়ছে দেশ, প্রাণ যায় অবস্থা

মোরসালিন মিজান ॥ সব আলোচনা পিছু হটেছে। গরম এখন একমাত্র আলোচনা। গ্রীষ্মকাল যেহেতু, আবহাওয়া উষ্ণ থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে গরম এত যে, গ্রীষ্ম বর্ষা দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ তাপমাত্রা এত ডিগ্রী সেলসিয়াস। কাল তত ডিগ্রী হতে পারে। থার্মোমিটারের পারদের এই ওঠা নামা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও। ঘামে ভেজা শরীরই সব বলে দিচ্ছে। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ যেন আর চলে না। সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব কি হঠাৎ কমে গেল? দু’য়ের মধ্যকার আনুমানিক দূরত্ব তো ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। ঘুচে গেল কখন! কেউ কেউ তো মজা করে বলছেন, মরে যাব। কারও কাছে দেনা থাকলে বলুন। শোধ করে মরতে চাই! ষড় ঋতুর দেশ। দুই মাস পর পর রূপ বদলায় প্রকৃতি। এখন গ্রীষ্ম। উষ্ণতম ঋতু। গরম অনুভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাছাড়া গ্রীষ্ম শেষ ও বর্ষার মাঝামাঝি সময়টাতে গরম একটু বেশি থাকে। কিন্তু সেই বেশি কত বেশি? গত শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কেন? উত্তরে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি এর কারণ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবও পড়েছে বাংলাদেশে। গোটা দুনিয়াই এখন উত্তপ্ত। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। একটির পর একটি রেকর্ড ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো বিপদের মুখে পৃথিবী! মূলত কার্বন নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। গবেষণা বলছে, নিঃসরণের এই হার গত সাড়ে ৬ কোটি বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিগত দিনের উষ্ণতার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছিল ২০১৫ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং দেশটির সমুদ্র্র ও বায়ুম-ল সংক্রান্ত প্রশাসনের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জনা যায়, ওই বছর বিশ্বের ভূভাগে ও সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক নয় শূন্য সেলসিয়াস বা এক দশমিক ৬২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। ২০১৬ সালের শুরু হতে না হতেই নতুন রেকর্ড। এপ্রিলে গড় তাপমাত্রার চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে চলে যায়। নাসার মতে, ১৯৫১-১৯৮০ পর্যন্ত বিশ্বে যে গড় তাপমাত্রা ছিল, গত বছর তা রেকর্ড পরিমাণ বাড়ে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড এক গবেষণায় বলেছে, শুধু ঢাকা শহরেই গত বছরের মে মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ সালের পর ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যায়। আর তার পর ২০১৭ সাল। না, উষ্ণতা কমেনি। বাড়ছে শুধু। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ ভাগ এবং ২০৭৫ নাগাদ তা প্রায় ২৭ ভাগ বেড়ে যাবে। আর তা হলে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়বে। তাতেই বাড়বে গরম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম অবশ্য এর জন্য মানুষকেই দায়ী করেছেন। তার মতে, হঠাৎ করেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছেÑ এমন নয়। মানুষ যা করছে তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে জনস্বাস্থ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর আরও বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতিশীল হলে প্রকৃতিও উদার হবে। সেই উদার প্রকৃতিই বাঁচাতে পারে পৃথিবীকে। প্রিয় বাংলাদেশকে।
×