ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

আপনার মেধা গড়ে তোলে আইকিউ, কিন্তু জীবন সফল করে ইকিউ!

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৯ জুন ২০২৫

আপনার মেধা গড়ে তোলে আইকিউ, কিন্তু জীবন সফল করে ইকিউ!

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবলমাত্র উচ্চ আইকিউ থাকলেই সাফল্য নিশ্চিত হয় না। আজকের দিনে জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ইকিউ।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কী?

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এমন একটি দক্ষতা যা নিজের ও অন্যের আবেগ চিনতে, নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এটি আত্মসচেতনতা, সহানুভূতি, সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মতো মানসিক ক্ষমতার সমন্বয়ে গঠিত।

মনোবিজ্ঞানী ড. ডেবোরা সেরানি বলেন, “ইকিউ আমাদের আবেগগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়, যা দৈনন্দিন জীবনে মানিয়ে চলতে সহায়তা করে।”

ব্যবসায়িক প্রশিক্ষক ও লেখক জেন শিরকানি বলেন, “উচ্চ ইকিউ-সম্পন্ন মানুষ পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, অন্যদের সঙ্গে দক্ষভাবে যোগাযোগ করতে পারে, সমস্যা সমাধানে পারদর্শী এবং জটিল পরিস্থিতিতে স্থির থাকে।”

কেন ইকিউ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে?

মনোবিজ্ঞানী মিশেল লেনো বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়ায় আমরা বুঝেছি, কেবলমাত্র পরীক্ষার নম্বর বা আইকিউ দিয়ে কারও সক্ষমতা বিচার করা যায় না। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের গুরুত্ব ক্রমাগত বাড়ছে।”

গবেষণা অনুযায়ী, ইকিউ বেশি এমন মানুষ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী, জীবনে বেশি সুখী এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কেও সফল। কর্মক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম—ইকিউ ভালো হলে নেতৃত্ব, দল পরিচালনা, সংকট মোকাবেলা এবং কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।

শিরকানি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন পদে সফলতার ক্ষেত্রে ইকিউ কখনো কখনো আইকিউ ও টেকনিক্যাল দক্ষতার চেয়েও দ্বিগুণ গুরুত্বপূর্ণ।”

আইকিউ ও ইকিউ-এর পার্থক্য কী?

আইকিউ সাধারণত যৌক্তিক চিন্তা, বিশ্লেষণ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা নির্দেশ করে এবং এটি বয়সের সঙ্গে তেমন পরিবর্তিত হয় না। অন্যদিকে, ইকিউ শেখা ও উন্নয়নযোগ্য একটি দক্ষতা, যা বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাড়ে।

লেনো বলেন, “একজন শিক্ষার্থী হয়তো উচ্চ আইকিউ নিয়ে কলেজে স্কলারশিপ পেয়েছেন, কিন্তু আবেগ সামলাতে না পেরে মাঝপথে কলেজ ছেড়ে দিয়েছেন—এটি কম ইকিউ-এর একটি উদাহরণ।”

কীভাবে বুঝবেন আপনার ইকিউ কতটুকু?

ইকিউ-এর কিছু লক্ষণ হলো:

  • নিজের আবেগ চিনতে পারা ও নিয়ন্ত্রণ করা

  • অন্যের আবেগ বোঝার সক্ষমতা

  • আত্মসমালোচনার ক্ষমতা

  • নম্রতা ও হাস্যরস বোধ

  • চাপ সামাল দেওয়ার দক্ষতা

  • সম্পর্ক রক্ষা ও সীমা নির্ধারণে সচেতনতা

  • আত্মসচেতনতা ও সহানুভূতির গভীরতা

ইকিউ কীভাবে উন্নত করবেন?

ইকিউ শেখা ও উন্নত করা সম্ভব। অনলাইন টেস্ট ছাড়াও প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ইকিউ মূল্যায়ন ও উন্নয়নের কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে ইকিউ কোচিং ও প্রশিক্ষণও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

শিরকানি বলেন, “ইকিউ বাড়াতে চাইলে ফিডব্যাক গ্রহণ, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং সচেতনভাবে আবেগ পরিচালনার চর্চা করতে হবে।”

ইকিউ হলো এমন একটি মানসিক সক্ষমতা, যা ব্যক্তি, সম্পর্ক ও কর্মজীবনে টেকসই সাফল্য এনে দিতে পারে। ড. সেরানি বলেন, “নিজের ও অন্যের আবেগ বুঝতে পারা মানেই জীবনে গভীর অর্থ ও মানসিক শান্তির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।”

আবির

×