ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রামকৃষ্ণদীর মাঠে ফুটবল উল্লাস–খাসি পুরস্কারে,মাদকমুক্ত সমাজ বদলের ডাক

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৯ জুন ২০২৫

রামকৃষ্ণদীর মাঠে ফুটবল উল্লাস–খাসি পুরস্কারে,মাদকমুক্ত সমাজ বদলের ডাক

ছবি: জনকন্ঠ

মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের রামকৃষ্ণদী বাজার মাঠ যেন ক্ষণিকের জন্য রঙিন ক্রীড়া রঙে সেজে উঠেছিল।গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাত অবধি মাঠজুড়ে ছিল গুমগুম শব্দে মানুষের ভিড়, উল্লাসের ঢেউ, আর প্রাণের স্পন্দন। কারণ সেদিন আয়োজন করা হয়েছিল এক ব্যতিক্রমী ফুটবল ম্যাচ—যেখানে পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের জন্য ছিল ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি আস্ত খাসি!

এটি কোনো সাধারণ খেলা নয়—বরং একটি বার্তা। “মাদক নয়, খেলাধুলায় সমাজ গড়ি”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে এমন এক আয়োজনে যেন মিশে গিয়েছিলো খেলাধুলার স্পৃহা আর সামাজিক দায়িত্ববোধ।

খেলায় মুখোমুখি হয়েছিলো এলাকার দুই দল—ছোট দল আর বড় দল। উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। স্থানীয় ভাষায় হাসিঠাট্টা আর চাপা প্রতিযোগিতা দুই দলের খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে স্পষ্ট। দর্শকেরা যে যার দলকে সমর্থন দিয়ে গলা ফাটিয়েছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই মিলে গলা মিলিয়েছেন জয়ধ্বনিতে।

শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেয় ছোট দল। তিন–এক গোলে হারিয়ে দেয় বড় দলকে। খেলায় শেষ বাঁশি বাজতেই বিজয়ীদের উচ্ছ্বাসে গর্জে ওঠে রামকৃষ্ণদী বাজার মাঠ। পুরস্কার হিসেবে বিশাল খাসি হাতে তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী দলের হাতে। হাসিমুখে, গর্বে বুক ফুলিয়ে সেই খাসি মিছিল করে নিয়ে যায় তারা।

এই পুরো আয়োজনের পেছনে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য খোকন মেম্বার। তার সার্বিক সহযোগিতায় এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্ভব হয়েছে। খোকন মেম্বার বলেন,“আমাদের ছেলেরা যেন মাদকের দিকে না যায়, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে ভালো কিছু নিয়ে ভাবুক, এটাই উদ্দেশ্য।”

দর্শকেরা জানালেন, এমন আয়োজন গ্রামের প্রাণে যেন এক নতুন রং ঢেলে দেয়। যারা খেলার জন্য আসেননি, তারাও কৌতূহল নিয়ে মাঠে চলে এসেছেন। খেলার আনন্দে গ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। শিশুদের চোখে জ্বলেছে স্বপ্ন—আমরাও একদিন এমন খেলবো, এমন পুরস্কার জিতবো।

গ্রামবাংলার মাটির গন্ধ মিশে থাকা এমন আয়োজন শুধু খেলার নয়, মানুষের মেলবন্ধনেরও। এক মাঠে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ। গ্রামের বুড়োরা হাঁটুর উপর হাত রেখে খেলা দেখে, মায়েরা সন্তান কোলে নিয়েও খেলার উত্তেজনা ভাগ করে নেন।

সবশেষে আয়োজনকারীরা বললেন—এটি যেন শেষ না হয় এখানেই। তারা চান, প্রতিবছর এমন আয়োজন হোক। আরও বড় পরিসরে হোক। গ্রামের ছেলেরা খেলায় মেতে উঠুক। সমাজ বদলাক খেলার শক্তিতে।

Mily

×