ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরকগ্রন্থ

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরকগ্রন্থ

চট্টগ্রামের প্রাণপুরুষ, এক সময়ের নগরপিতা এবিএম মহিউদ্দিন স্মরণে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে প্রকাশ পাওয়া ‘সাংবাদিকবান্ধব, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী স্মরক গ্রন্থ পাঠকের সামনে হাজির হয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৭ সালের বিজয়ের মাস ১৫ ডিসেম্বরে এই মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, গণমানুষের নেতার জীবনাবসান হয়। প্রথম মৃত্যূবার্ষিকীর আগেই তাঁর বিচিত্র জীবন নিয়ে লিখিত বইটি এই চট্টল পিতার প্রিয় মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। এমন একটি মূল্যবান গ্রন্থ প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব। প্রচ্ছদ আঁকেন উত্তম সেন। সাংবাদিকদের প্রতি দায়বদ্ধ দরদী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গণমাধ্যম কর্মীরা সব সময় সশ্রদ্ধ অনুভবে এই মহৎ মানুষটির পাশে বিরাজ করত। সেই দায়বোধ থেকেই প্রেসক্লাব এমন একটি সময়োপযোগী গ্রন্থ প্রকাশের তাগিদ অনুভব করে। আর তা করতে গিয়ে স্বল্প পরিসরে সাংবাদিক ঘনিষ্ঠতার প্রসঙ্গই শুধু আসেনি তার চেয়ে বেশি তার সমৃদ্ধ জীবন ও কর্ম প্রবাহের বহু ঐতিহ্যাসিক ও মানবিক ঘটনাও বইটির অনুষঙ্গ হয়েছে। শুরুতেই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ ও কলিম সরওয়ার মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাংবাদিক সমাজের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে উভয় পক্ষের যে মিলিত সহযোগিতাও সহমর্মিতা তাকেই অত্যন্ত সাবলিলতায় পাঠককে জানিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি। প্রিয় ও ¯েœহভাজন সাংবাদিকদের একান্ত সন্নিকটে থেকে পেশাগত জীবনের অনেক সঙ্কট ও সম্ভাবনাকে যেভাবে আন্তরিক অনুভূতিতে বিবেচনায় এনেছেন তা যেমন অতুলনীয় একইভাবে পথ নির্দেশকমূলকও বটে। এই অনন্য মানবিক ও সামাজিক মানুষটি তার মহতী কর্মজীবনকে যে মাত্রায় মানুষ আর তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য সমর্পণ করেছেন সেখানে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। নির্মোহ রাজনীতির সুবিশাল কর্মযজ্ঞে চারপাশের সাধারণ মানুষ আর তাদের জীবন মানের উৎকর্ষ করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময়ই ছিল না। এবিএম মহিউদ্দিনের কর্মবহুল জীবনের বিচিত্র জনহিতকর এমন অনেক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তার নিকট জনেরা। আন্তর্জাতিক সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন থেকে শুরু করে খ্যাতিমান সাংবাদিক আবুল মোমেন, অরুণ দাশ গুপ্তসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট জনেরা এই বিরাট মাপের মানুষটিকে নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির বলয়কে নানা মাত্রিকে উজ্জীবিত করেছেন। সেখান থেকে ওঠে আসে একজন সংগঠক, নেতা কিংবা রাজনীতিবিদই নন পরিপূর্ণ মানবিক মানুষ হওয়ার সমস্ত গুণাবলী তার মধ্যে সক্রিয় ছিল। সময়ে তা আরও আলো বিকিরণ করে সমকালীন আঙ্গিনাকে যে মাত্রায় শাণিত করেছেন সেখান থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না কোন সমাজ কিংবা কালে মহানায়ক হয়ে একজন যথার্থ মানুষ কিভাবে অতি সাধারণের মধ্যে অনন্য সাধারণ হয়ে যেতে সময় নেন না। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ এমন কৃতীজনকে স্মরণে এনে তাঁর আকাশছোঁয়া কর্মপ্রবাহ আর বিত্তবৈভব মুক্ত নির্লোভ চেতনাকে দর্শককে উপহার দেয়ার জন্য। ‘সম্পাদকীয়’তে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী এই চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিন¤্র শ্রদ্ধায় অন্তরনিঃসৃত প্রণতি জানিয়ে এমন গুণীজনের সমৃদ্ধ কর্মজীবনকে স্মরণ করে তাঁর আপোসহীনতার কাঠিন্যকেও তুলে ধরেন। আর সাংবাদিকতার জগতে এই নগর নায়কের যেমন অবারিত দ্বার ছিল একইভাবে এই গণমাধ্যমে আঙ্গিনাটিও এই পর্বতসমান দেশ নেতাকে আপন করে নিতে দেরি করেনি। ফলে কোন এক সুবর্ণ সময়ে সাংবাদিকতা ও নগর পিতা এক সূত্রে গেঁথে যায়। এই কথা সুবিদিত সংবাদ কর্মীরা সাধারণ গণমানুষের। আর সেখানে জনসমুদ্রের কাতারে দাঁড়ানো এই অদম্য নেতৃত্বকে কোনভাবেই এই মহৎ কর্মযজ্ঞ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। টানা ১৭ বছর চট্টগ্রামের সর্ববিধ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে এই বীর পুরুষ মানুষের কল্যাণে যা যা করণীয় সবটাই করেছেন নির্দ্বিধায়, অকুণ্ঠচিত্তে আর দুঃসাহসিক মনোবলে। খ্যাতিমান সমাজ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন মননশীল অনুভবে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধুর চট্টগ্রাম লালদীঘির ময়দানে ছয় দফা কর্মসূচী উপস্থাপনের ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণে চট্টগ্রামের অনেক নেতার সঙ্গে সেদিনের ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীরও পাশে থাকার স্মৃতিচারণ করেন। সেই যে শুরু করলেন অগ্নি¯œাত সময়ের ঐতিহাসিক ও স্বদেশ প্রেমের কার্যক্রম সেখান থেকে আমৃত্যু তাকে কখনও চ্যুত হতে দেখা যায়নি। জনহিতকর কর্মে নিজেকে নিঃশেষে সমর্পণ করতে গিয়ে এই চট্টল নায়ক মনোমুগ্ধকর, সজীব সাজানো নগর তৈরি করা থেকে শুরু করে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবান্ধব বন্দর নগরীর উৎকর্ষ সাধনে প্রয়োজনীয় কর্মপ্রকল্প হাতে নিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবুল মোমেন লেখেনÑ ব্যতিক্রমী স্বাধীন রাজনীতিক হিসেবে মহিউদ্দিনের যুগান্তকারী ভূমিকা। জনগণের অকল্যাণে কোন কর্মসূচী যা দেশী কিংবা বিদেশী শাসকদের দ্বারাই নির্ধারিত হোক না কেন, জোরালো প্রতিবাদে, অনমনীয় দৃঢ়তায় আর অকৃত্রিম দায়বদ্ধতায় পর্বত সমান প্রতিরোধ তৈরি করতে তাকে কখনও ভাবতে হয়নি। এমন স্বাধীনচেতা প্রত্যয়ী, শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশের মঙ্গলের জন্য অনেক জরুরী। বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে কোন সন্দেহ নেই। সময়ের প্রজন্মকে এই কর্মবীর মুক্তিযোদ্ধা সব সময় প্রাণিত করবে এমন আশা ব্যক্ত করে বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
×