ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

কবি ও গদ্য লেখক জন মিল্টন

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

কবি ও গদ্য লেখক জন মিল্টন

বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন জন মিল্টন। কালজয়ী চধৎধফরংব খড়ংঃ মহাকাব্যের জন্য তিনি অমর হয়ে আছেন। ১৬০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরের ব্রেড স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজী সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জন মিল্টন। জন মিল্টন ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী কবি। ইংরেজী সাহিত্যে শেক্সপিয়রের পরেই যার স্থান বলে মনে করেন অনেকে। স্কুলের ছাত্র থাকাকালে মিল্টন নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি লাতিন, গ্রিক, হিব্রু ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। সে সঙ্গে কাব্যচর্চাও শুরু করেন। ১৬২৬ সালে কলেজে পড়ার সময় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। জন মিল্টনের সবচেয়ে বিখ্যাত ও কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি মহাকাব্য চধৎধফরংব খড়ংঃ এছাড়া তার রচিত উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ হচ্ছে- কবিতাগ্রস্ত লাইসিডাস, প্যারাডাইস রিজেন্ট, স্যামসন এনিস্তে, লা এলেগ্র, কাব্যনাটক কমাস, গদ্য রচনা অব এডুকেশন, এরিওপোজিটিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিল্টনের রচনাকে তিনটি সময়কালে ভাগ করা যায়। প্রথম অধ্যায় ১৬২৯ থেকে ১৬৪০ সাল। এ সময়ের মধ্যে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ ও কাব্য রচনা করেন। তরুণ বয়সে রচিত হলেও এ সময়কার লেখার বিষয়বস্তু বেশ গুরুগম্ভীর। ঙহ ঝযধশবংঢ়বধৎব, ঙহ অৎৎরারহম ধঃ ঃযব ধমব ড়ভ ঞবিহঃ-ঃযৎবব, ঙহ বফঁপধঃরড়হ প্রভৃতি তার সুবিখ্যাত প্রবন্ধসমূহ। অৎপবফরং, খুপরফধং এ সময় তার রচিত বিখ্যাত কাব্য। দ্বিতীয় অধ্যায়টি ১৬৪০ থেকে ১৬৬০ সাল অবধি বিস্তৃত। রাজনৈতিক আন্দোলনের খরস্রোতে এই সময়কাল তিনি অতিবাহিত করেছেন তার বিদ্রোহী সত্তা ব্যবহার করে জনমনে উদ্দীপনা আর পথনির্দেশনা নিয়ে আসতে। ঞযব ঞবহঁৎব ড়ভ করহমং ধহফ গধমরংঃৎধঃবং,ঞযব অমৎববসবহঃ ড়ভ ঃযব চবড়ঢ়ষব তার রাজনৈতিক প্রবন্ধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পরের বছরগুলোকে ৩য় অধ্যায় বলা হয়। প্যারাডাইজ লস্ট মহাকাব্যটি মিল্টনের সময় থেকে আজ অবধি ইংরেজ সাহিত্য-সমালোচনার কেন্দ্রেই রয়ে গেছে। ১৬৫৮ থেকে ১৬৬৪ সালের মধ্যে মিল্টন তার মহাকাব্য প্যারাডাইজ লস্ট রচনা করেন। বাইবেলের কাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত এই মহাকাব্যটি ১৬৬৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। মানুষ জীবনের সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কিভাবে মহান হতে পারেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি। সে সময় তিনি অন্ধ এবং দরিদ্র ছিলেন। মহাকাব্যটি তার নিজের জীবনের হতাশা এবং ব্যর্থতা তুলে ধরে, একই সঙ্গে মানুষের সুপ্ত ক্ষমতাকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে। মহাকাব্য চধৎধফরংব খড়ংঃ শুধু ইংরেজী সাহিত্যই নয় বরং বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা সম্পদ। ব্লাঙ্ক ভার্স বা মুক্ত ছন্দে রচিত মহাকাব্যটি নিয়ে তখন থেকেই বর্তমান অবধি ব্যাপক ধর্মীয় সমালোচনা আছে। সেখানে ঈশ্বর এবং শয়তানের ভূমিকা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। যা জন্ম দেয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাহিত্য বিতর্কের। পরে ১৬৬৭ সালে দশ খ-ে প্রকাশিত হয়েছিল সেটি। প্রকাশের পর পরই দুনিয়াব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬৭১ সালে প্যারাডাইস লস্টের পরবর্তী অংশ প্যারাডাইজ রিগেইনড প্রকাশিত হয়। সেটা নিয়েও কম আলোচনা হয় না। এটাও ক্লাসিক মর্যাদা পেয়েছে। ১৬৩৮ সালে মিল্টন ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। তৎকালীন ইউরোপের শিল্প-সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু ইতালিতে কয়েক মাস কাটিয়ে তিনি ১৬৩৯ সালের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ১৬৪২ সালে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পার্লামেন্ট এবং রাজার মতবিরোধের কারণে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মিল্টন পার্লামেন্টের সমর্থনে গদ্য রচনা শুরু করেন। সে সময় মিল্টন তার সেরা সাহিত্য রচনা শুরু করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিষয়ে তার এ্যারোপাগিটিকা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিষয়ে লিখিত অৎবড়ঢ়ধমরঃরপধ- যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মূলত অনিবন্ধিত মুদ্রণগুলোকে ইংল্যান্ডের সংবিধান কর্তৃক বৈধতাদানের পক্ষে মিল্টনের বক্তৃতার লেখা। বাক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে এটি। এটি মানুষের বাক স্বাধীনতা, মুদ্রণ স্বাধীনতা ও সংগ্রামের এক জীবন্ত দলিল। ১৬০৮-১৬৭৪ জন মিল্টন ইংরেজ কমনওয়েলথের একজন সরকারী কর্মচারী ছিলেন। গৃহযুদ্ধের পর রাজা প্রথম চার্লসকে মৃত্যুদ- দেয়া হলে মিল্টন ১৬৪৯ সালে তিনি ঞযব ঞবহঁৎব ড়ভ করহমং ধহফ গধমরংঃৎধঃবং রচনা করেন। এ বইতে রাজার করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরেন। জনগণই যে দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তা উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণই দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’। ১৯৭৩ সালে মিল্টন তার ১৬৪৫টি কবিতা এবং তার চিঠির সংগ্রহ পুনরায় প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি ক্যামব্রিজে থাকাকালীন ল্যাটিন ভাষায় লেখা খসড়াগুলোও প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্য জার্নালের কল্যাণে মিল্টনের অবদান একুশ শতাব্দীতেও অটুট রয়েছে। মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত মিল্টনের জীবন নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। ১৬৭৪ সালের ৮ নবেম্বর লন্ডন শহরে মারা যান বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মহান কবি জন মিল্টন।
×