ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নুরুল ইসলাম বাবুল

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার প্রতিটি শব্দ সত্য আর সুন্দর

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ জুলাই ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার প্রতিটি শব্দ সত্য আর সুন্দর

সেই কবে যেন কবিতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। হতে পারে কিশোরবেলায়। তখন বুঝে অথবা না বুঝেই বার বার কবিতা পড়েছি। তারপর মুগ্ধ হতে হতে কবিতার ভেতরে পেয়েছি জীবনের আস্বাদ। কবিতা আমাকে ঋদ্ধ করেছে, শুদ্ধ করেছে, করেছে খানিকটা অহঙ্কারী। বোধের গভীর থেকে উচ্চারিত হয় যে কবিতার প্রতিটি শব্দ, ইচ্ছে করলেই সেই কবিতা ধরা যায় না, নির্মাণ করা যায় না। আমি যখন কবিতা লিখতে চেয়েছি, পারিনি। যখন ঠিক লিখে ফেলেছি, অনায়াসে তা পেরেছি। কেমন করে পঙক্তিগুলো এসেছে আমি তা জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না। আমার মনে হয় কে যেন আমাকে দিয়ে কথাগুলো লিখে দিয়ে যায়। আর যখন লেখা হয়ে যায় তার পরের মুহূর্তগুলো কেটে যায় মায়াবী ঘোরের ভেতর। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। কেমন- কেমন, তা বলতে পারব না। শুধু আমি যেন আনন্দ আর উত্তেজনায় বিভোর হয়ে থাকি। আর বার বার আওড়াতে ইচ্ছে করে সদ্যপ্রসূূত বাক্যগুলো। যদি একটা চরম সত্য কথা বলা যায় তবে অনায়াসে বলতে পারি, কবিতা যাকে স্পর্শ করেছে আলিঙ্গনে-আলিঙ্গনে মধুর করে তুলেছে তার জীবন। কবিতার ভেতর যে ডুব দিয়েছে কোন মিথ্যাই তাকে আসক্ত করতে পারেনি। কেননা, কবিতার প্রতিটি শব্দ অমোঘ সত্য আর সুন্দর। ** বিছানার কলঙ্ক ঘুমের গন্ধ পেয়ে রাতের শয্যায় শোয় ক্লান্ত বিকেল বংশপরম্পরায় এই রাত এই বিকেল এই ঘুম চষে বেড়ায় নক্ষত্রের আলো- নীরবতা...শূন্যতা... স্তব্ধতার আস্বাদ; তবু কিছু স্বপ্ন জমে থাকে অতিক্রান্ত সময়ের কাছে কিছু প্রেম বিকশিত হতে হতে কিশোরীর চুরি ভাঙে এবং ভাঙার শব্দে হেসে লুটোপুটি খায় লতাপাতাঘাস; তারপর কত রাত ভোর হয়- ফের এসে ফিরে যায় ফেরারি বিকেল থেকে যায় শুধু বিছানার কলঙ্ক। ** আঁধারেই কেটে যায় অর্ধেক জীবন একদিন এইসব পাড়ায় পৌঁছে গেল সরকারি আলো আমরা মেতে উঠলাম আনন্দে উৎসবে, দিন বদলের হাওয়ায়- বদলে যায় পাড়ার ঘরবাড়ি, গৃহ-আসবাব উঠোনে আর পৌঁছায় না মায়াবী জোছনার আলো জোনাকিরা পালাতে পালাতে নিঃশেষ প্রায়; ঘরে ঘরে বসানো হয়েছে রঙিন পর্দা দিনরাত লাফালাফি খিস্তি-খেউর, হারিয়ে গেছে হানিফ ম-লের দেহতত্ত্ব গানের আসর অথবা রাতভর পালাগান; আহা! আলো চারিদিকে ঝলমলে আলো, তবু আঁধারেই কেটে যায় অর্ধেক জীবন। ** অংশীদার হঠাৎ চিনে ফেললে কবির দুঃখ ফালাফালা হয়ে যায় আলো-ছায়া-রোদ-বৃষ্টি ছোটাছুটি করে পালিয়ে যায় কিছু আয়ু কবির দুঃস্বপ্নের মতো... তবু পৃথিবীর অরণ্যে আমরা কবির দুঃখ চিনি আর ভাগাভাগি করি। ** তোমার আঁধারটুকু তোমার পায়ের তলায় জমে আছে রাতের আঁধার জমে আছে অযুত-নিযুত বছর; সূর্যের তাবৎ শক্তি ব্যর্থ সে আঁধারের কাছে। তবে মিথ্যা পৃথিবীর সব আলো হাসি-গান, সব কোলাহল... কেবল তোমার আঁধারটুকুই সত্যি। তবু তোমার পায়ে বাজে নূপুরের গান তবু তুমি হেসে ওঠো খিলখিল তবু তুমি বিলিয়ে দাও তুমুল আরাম... তোমার কানে পৌঁছায় না সূর্যের বিলাপ নিরন্তর সেই আগুনমাখা কান্নার আওয়াজ; কৃত্তিম ক্যানভাসে তোমাকে দেখি কেটে যায় মাতাল সময়, হৃদয়হীন আঘাতে বার বার রক্তাক্ত তুমি... ক্ষতগুলো তবু শুকায় একদিন মুছে যায় চিহ্ন; শুধু আঁধারটুকু জমতে-জমতে জমতে-জমতে ঢেকে দেয় তোমার আপাদমস্তক। ** হেঁটে যায় আদিমাতা বাতাসে উড়িয়ে চুল হেঁটে যায় আদিমাতা আমি তার চুলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে খেয়ে ফেলি নিষিদ্ধ গন্ধম... মাতাল রৌদ্রে তখন উতালা দুপুর ঢেলে দেয় বিষাক্ত নিঃশ্বাস অচেনা পথিক শরীরের নোনা ঘাম ঝেড়ে ফেলে মায়াবতী বটের ছায়ায়... এ মনে লাগে উদাসী হাওয়া তবু পেরুতে পারি না সংসারের চৌকাঠ ডিঙানো হয় না সামাজিক প্রথা; আদিমাতা, হেঁটে যায় উড়িয়ে পথের ধুলো আমি তার চুলের গন্ধ শুঁকে শুঁকে খেয়ে ফেলি নিষিদ্ধ গন্ধম।
×