ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গণপরিবহনে হেনস্তা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৫ মে ২০২৫

গণপরিবহনে হেনস্তা

বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে নারীরা আসলেই কোথায়ুৃ নিরাপদ? সেই ছোট্ট গৃহকোণ পরিবার থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে। কন্যা সন্তান পৃথিবীর আলো দেখা মানে জন্মই যেন আমার আজন্মের পাপ। সমাজ সভ্যতার চিরায়ত কঠিন বিধি। কালের প্রবাহে সময়ের দাবিতে নতুন মোড় নেওয়াও পরিস্থিতির ন্যায্যতা। আমাদের বাংলাদেশও কন্যা শিশু কিংবা নারীদের প্রাপ্য অধিকার দাবি সম্মান দিতে কেমন যেন পিছু হটে। শ্রেণি বিভক্ত আর সমাজে শুধু বিত্ত কিংবা মর্যাদার ফারাক নয় বরং অনিবার্যভাবে দৃশ্যমান হয় নারী-পুরুষের অসমতা, বিভাজন। যুগ-যুগান্তরের এক কঠিন বলয়। সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার সমাজ কাঠামোর অভ্যন্তরীণ বলয় থেকে। যা আজ অবধি রুদ্ধতার জাল বিছানো। তথ্য প্রযুক্তি নিত্যনতুন উদ্ভাবনে সমাজ এগিয়েছে বহু দূর। সেখানে নিম্নবিত্ত আর সমসংখ্যক নারীর অবস্থান সহনীয় নয় বলে তথ্য উপাত্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। রাস্তাঘাটে গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনার আঁচড়। যার ক্ষতচিহ্ন আজও গোছানো গেল না। দাঁড়িয়ে আছি একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে। প্রযুক্তির নিত্যনতুন অভিগমনে সমাজ সংস্কারের নবায়ন, নতুন নির্দেশনা এগিয়ে যাবে অবশ্যই। প্রত্যাশিত হলেও হতাশাব্যঞ্জক অবস্থার নির্মম যাতনা। সেখানে সরব প্রতিবাদে আওয়াজ তোলা হচ্ছেÑ আর চুপ থাকা নয় বরং প্রতিরোধের প্রাচীর তুলে দেওয়াও বিরূপ পরিস্থিতিকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা। আর গণপরিবহনের নারীর হেনস্তা যেন এক অপ্রতিরোধ্য বলয়। এমন অসহনীয় পরিবেশের বিপরীতে সোচ্চার হয়ে সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তার বেষ্টনী আরোপ করতে একতাবদ্ধ হচ্ছেন। শুধু নারী নয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এমন দুর্বিষহ ঘটনার মুখোমুখি হতে যেন সম্মুখ যুদ্ধকে আলিঙ্গন করা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে শক্ত পায়ে না দাঁড়াতে পারলে চলমান হেনস্তা কমবে না বরং বাড়তে থাকবে।
এক সংঘবদ্ধ প্রচারাভিযানে নারীরা সমবেত হয়ে নিজেদের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরও জোরদার করার উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান। সেখানে শুধু গণপরিবহন নয় যে সব ক্ষেত্রে নারীদের লাঞ্ছিত কিংবা অবদমিত করা হচ্ছে সব ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য নির্মূল করাও নতুন পরিবেশকে সময়ের ভেতরের বোধে জিইয়ে থাকাও প্রয়োজনীয় ব্যাপার। অন্তর্ভুক্তিমূলক যাতায়াত ব্যবস্থাপনায় লিঙ্গ সমতা ও জরুরি বিষয় হিসেবে সম্পৃক্ত থাকা সমসংখ্যকের জন্য নিরাপদ যাত্রার নিশ্চয়তা। এর অন্যথা পরিস্থিতি ঘোলাটে কিংবা অসহনীয় হতে সময় নেবে না। বর্তমান সরকারও তেমন লক্ষ্যে সমতাভিত্তিক নিরাপদ সমাজ এগিয়ে নিতে বিভিন্ন কর্মসূচি সামনে নিয়ে আসছে। গণপরিবহনে কোনোভাবে নারীর সম্মানহানি পাশে বসে থাকা অন্যদের জন্যও সহায়ক পরিবেশ থাকে না।
সঙ্গতকারণে একই পরিবহনের যাত্রী তিনি নারী-পুরুষ যেই হোন না কেন প্রতিবাদে, বিক্ষুব্ধ হয়ে উপস্থিত অমূলক অসদাচরণের প্রতিরোধ করাও এক প্রকার সামাজিক দায়বদ্ধতা। সমাজ একটি সুশৃঙ্খল সুসংগঠিত মানবিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে অহেতুক, অযাচিত কোনো অনাচার, কটাক্ষ কিংবা অবিচার সহ্য করার মতো বিষয়ই নয়। মানুষ মানুষের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সেখানে মানবতার অবক্ষয়, মনুষ্যত্বের  অপমান, শারীরিকভাবে অপদস্থ করা সমাজবহির্ভূত বেআইনি কার্যকলাপে আবর্তিত হয়। যে কোনো সমাজ সংস্কার নির্দিষ্ট নিয়ম, নীতি, আদর্শ আর ন্যায়নিষ্ঠতায় অঙ্গীকার বদ্ধ থাকে। শুধু নারী কেন সমাজের যে কোনো মানুষের সঙ্গে অপব্যবহার, অপমান, অসম্মান যদি মাথাচাড়া দেওয়া সেটাও সভ্যতা বিবর্জিত বন্যদশার অসহনীয় দুর্ভোগ। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল পরিণতি শুধু স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থারই পতন নয় তার সঙ্গে দৃশ্যমান সমাজের গভীরে গেড়ে বসা নানামাত্রিক অসামঞ্জস্যতা, অসমতা আর বিভাজনের তীক্ষè আঁচড়। সার্বিক বৈষম্য কিংবা অকারণ লাঞ্ছনা, নির্যাতনকে ঠেকাতে গেলে সরব প্রতিবাদে মুখর হলেই চলবে না। বরং যথাযথ ব্যবস্থাপনায় অমূলক অসামঞ্জস্যতা দূর করা নতুন বাংলাদেশের জন্য আর এক সংগ্রামী অভিযাত্রা বটে। গণপরিবহনের চালক, কন্ডাক্টর সাহায্যকারী এবং যাত্রীদের প্রতিও ভালো ব্যবহার, সৌজন্যমূলক আচরণ গণপরিবহন বিধির আওতায় আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতেও আহ্বান জানানো হয়েছে।  বিষয়টা নতুন নয় যত্রতত্র নারীর প্রতি অসৌজন্যমূলক ব্যবহার, অপ্রীতিকর অঘটন সব যেন এক চিরায়ত শৃঙ্খলে আটকা পড়ে আছে।
তেমন বিশৃঙ্খল শেকল ভেঙে দিয়ে নতুন শৃঙ্খলাবদ্ধ সহনীয় যাত্রা অবারিত করাও সব মানুষের জন্য নিরাপদ বেষ্টনী মজবুত করা। সমসংখ্যক নারী অপেক্ষাকৃত কোমলই শুধু নয় মঙ্গল আর মাধুরী মিশিয়ে এক কাতারে মানুষের মর্যাদায় দাঁড়াবে। আর সেটাই হবে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ের শুভ সংকেত, মঙ্গলদ্বীপ জ্বালানো।
নারীকে মানুষ ভাবার দৃঢ় প্রত্যয় সকলের মধ্যে উজ্জীবিত করাও বৈষম্যপীড়িত, শ্রেণিবিভক্ত সমাজের জন্য অপরিহার্য এক বার্তা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেন মানুষের সঙ্গে মানুষের সহজ মিলনের পথে সর্ববিধ বাধা, ব্যবধান অপসৃত না হলে শুধু সমতাভিত্তিকই নয় নতুন সভ্যতার নব আলোক ও বিচ্ছুরিত হতে আরও সময় গড়িয়ে যাবে। সমাজের হরেক সংকট তৈরি হয় ব্যবধানের প্রাচীর যদি স্বচ্ছন্দ গতিতে সামনে চলার পথকে অবারিত করতে পিছু হটে। তাই অনাকাক্সিক্ষত কাঁটা ছ্ড়ানো পথকে নির্মল অবগাহনে অবারিত করাই জীবন।

প্যানেল

×