
ছবি: সংগৃহীত
আমরা সাধারণত ধূমপান, দূষণ কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবারকে ক্যান্সারের মূল কারণ হিসেবে ভাবি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন—আপনার ঘরের ভেতরেই লুকিয়ে থাকতে পারে এমন কিছু জিনিস, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। রান্না, খাবার সংরক্ষণ কিংবা ঘরের বাতাস সতেজ রাখার জন্য যেসব জিনিস প্রতিদিন ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মধ্যেই রয়েছে বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদান। নিচে এমন ৭টি জিনিসের তালিকা দেওয়া হলো এবং কীভাবে আপনি বিকল্প হিসেবে নিরাপদ পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
১. নন-স্টিক রান্নার পাত্র
নন-স্টিক বা টেফলন-কোটেড পাত্রে রান্না সহজ হলেও, উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যবহারে তা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ছাড়ে। এতে থাকা PFOA (পার-ফ্লুওরোকটানোইক অ্যাসিড) ও অন্যান্য বিষাক্ত যৌগ দীর্ঘমেয়াদে কিডনি ও টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিকল্প ব্যবহার: স্টেইনলেস স্টিল, কাস্ট আয়রন বা সিরামিক পাত্র।
নন-স্টিক ব্যবহার করলে কম আঁচে রান্না করুন এবং পাত্রটি যেন না আঁচড়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
২. প্লাস্টিকের পানির বোতল
এই বোতলগুলোতে BPA ও ফথালেটস নামক রাসায়নিক থাকে, যা হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে। বিশেষ করে গরমে বোতল গরম হলে এই বিষাক্ত পদার্থ পানিতে মিশে যেতে পারে। কিছু গবেষণায় BPA-এর সঙ্গে স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের সংযোগ পাওয়া গেছে।
বিকল্প: গ্লাস বা স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহার করুন।
পুরোনো প্লাস্টিক বোতল পুনঃব্যবহার করবেন না এবং কখনোই গরম স্থানে রাখবেন না।
৩. অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
অনেকেই খাবার মুড়াতে বা বেক করতে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করেন। তবে গরম বা টকজাত খাবারে ফয়েল থেকে অ্যালুমিনিয়াম মিশে যেতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালুমিনিয়াম শরীরে সঞ্চিত হলে স্নায়ুবিক সমস্যা ও স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
বিকল্প: পারচমেন্ট পেপার বা কলাপাতা ব্যবহার করুন।
বেকিংয়ের সময় গ্লাস বা সিরামিক পাত্র বেছে নিন।
৪. প্লাস্টিকের খাবার সংরক্ষণ পাত্র
প্লাস্টিকের কনটেইনার, যেমন টাপারওয়্যার, সাধারণত BPA, ফথালেটস ও ডাইঅক্সিন বহন করে। মাইক্রোওয়েভে গরম করলে এই ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলো খাবারে মিশে যেতে পারে। অনেক স্বাস্থ্য সংস্থা এই উপাদানগুলোকে সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিকল্প: গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল বা সিলিকন পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করুন।
“মাইক্রোওয়েভ-সেইফ” লেখা থাকলেও প্লাস্টিকে খাবার গরম করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. পরিশোধিত তেল
পরিশোধিত ভেজিটেবল অয়েল—বিশেষ করে যেসব তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি, সেগুলো উচ্চ তাপে প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় ক্ষতিকর ট্রান্স ফ্যাট ও ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি করে। এই উপাদানগুলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা কোলোরেক্টাল ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিকল্প: অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা সরিষার তেলের মতো ঠান্ডা চাপা তেল ব্যবহার করুন।
গভীরভাবে ভাজা খাবার ও তেল বারবার গরম করে ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
৬. সুগন্ধি মোমবাতি
রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যবহৃত সুগন্ধি মোমবাতি পুড়লে বেনজিন ও টলুইন নির্গত হয়, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও প্যারাফিন ওয়াক্স থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়, যা ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রে ক্ষতি করতে পারে।
বিকল্প: মৌমাছির মোম (beeswax) বা সয়াবিন দিয়ে তৈরি প্রাকৃতিক মোমবাতি ব্যবহার করুন।
ঘ্রাণের জন্য এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজার ব্যবহার করা নিরাপদ।
৭. প্লাস্টিকের কাটিং বোর্ড
প্লাস্টিকের কাটিং বোর্ড ব্যবহার করতে করতে ক্ষয়ে গিয়ে তাতে ছোট ছোট কণিকা তৈরি হয়, যা খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং এতে থাকা রাসায়নিক শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
বিকল্প: কাঠ বা বাঁশের তৈরি কাটিং বোর্ড ব্যবহার করুন।
পুরোনো, আঁচড় পড়া বোর্ড দ্রুত বদলে ফেলুন।
আপনার ঘরের প্রতিদিনকার ব্যবহৃত এইসব সাধারণ জিনিসই হতে পারে নীরব ঘাতক। তাই এখনই সচেতন হন, নিরাপদ বিকল্প বেছে নিন এবং সুস্থ জীবন গড়ুন।
আবির