ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে চান? মস্তিষ্ক শাণিত করার ৮টি বৈজ্ঞানিক অভ্যাস

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৯ জুন ২০২৫

বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে চান? মস্তিষ্ক শাণিত করার ৮টি বৈজ্ঞানিক অভ্যাস

ছবি: প্রতীকী

বুদ্ধিমত্তা শুধু জন্মগত প্রতিভার ব্যাপার নয়—এটা একটা চর্চা, অভ্যাস, এবং মানসিক পুষ্টির ফল। আজকের দ্রুতগতির জগতে টিকে থাকতে হলে কেবল উচ্চ আইকিউ নয়, দরকার মানিয়ে চলার ক্ষমতা, জ্ঞানের বিস্তার এবং চিন্তার গভীরতা। প্রতিদিন একটু একটু করে মস্তিষ্ককে শাণিত করা যায় কিছু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে। জেনে নিন মনের ধার বাড়ানোর এমনই ৮টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়—

১. মানসিক ডায়েট: আপনি যা পড়ছেন, শুনছেন, দেখছেন—সবই আপনার মস্তিষ্ক গঠনে ভূমিকা রাখছে

শরীর যেমন খাবারে চলে, তেমনি মস্তিষ্ক চলে চিন্তন-উপযোগী তথ্যের ওপর। প্রতিদিন অন্তত একটি "পুষ্টিকর" বিষয় পড়ুন বা শুনুন—একটা চিন্তায় ভরপুর বই, একটি জটিল ধাঁধা, বা একটি গভীর আলোচনাভিত্তিক পডকাস্ট। ফেসবুক স্ক্রল বা ইউটিউব শর্টসের ফাঁদে না পড়ে বেছে নিন এমন কিছু যা কৌতূহল উসকে দেয়। নিয়মিত মানসিক চ্যালেঞ্জই মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে।

২. কৌতূহলের পেশি গঠন করুন: প্রতিদিন অন্তত একটি "কেন?" প্রশ্ন করুন

শিশুরা যেমন প্রতি মুহূর্তে “কেন?” প্রশ্ন করে, তেমনি কৌতূহলই শেখার মূল চালিকা শক্তি। প্রতিদিন অন্তত একবার নিজেকে বা অন্যকে প্রশ্ন করুন—কেন মানুষ এমন করে? কেন এই নিয়ম আছে? যত বেশি প্রশ্ন করবেন, তত গভীর হবে আপনার উপলব্ধি। কৌতূহল বাড়ায় সংযোগ ক্ষমতা এবং চিন্তাশক্তির প্রসার।

৩. নীরব সময়: পাঁচ মিনিটের নিরবতা দারুণ উপকারী

প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মিনিট একেবারে নিরিবিলিতে বসুন—না মোবাইল, না গান, না বই। শুধু নিজের চিন্তার সঙ্গে একা। এই মস্তিষ্কের নীরব বিশ্রাম সময়ে নানা ভাবনা ও সমস্যা মনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুরুতে অস্বস্তিকর মনে হলেও, ধীরে ধীরে ভাবনায় গতি আসবে এবং সৃজনশীলতা বাড়বে।

৪. চিন্তা করুন: সমাধান খুঁজতে পেছনের পথ ধরুন

যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজতে সামনে থেকে নয়, বরং ফলাফলকে ধরে পেছন দিক থেকে চিন্তা করুন। ধরুন সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে—তাহলে কী কী ঘটেছিল আগে? এই পদ্ধতি আপনার মস্তিষ্ককে নতুনভাবে ভাবতে শেখায় এবং সমাধানে যুক্তির ধারা তৈরি করে। একে বলে “রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং চিন্তা”।

৫. শিখে শেখান: যা শিখছেন, তা কাউকে বোঝান

আপনি কোনো একটি বিষয় কাউকে বোঝাতে গেলে সেটি নিজের ভেতর আরও পরিষ্কার হয়। নতুন শেখা একটি বিষয় নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করুন বা নিজের কাছেই সহজ করে বলুন। আপনি যত সহজভাবে বোঝাতে পারবেন, তত বেশি নিশ্চিত হবেন আপনি আসলেই তা বুঝেছেন।

৬. অভ্যস্ততা ভাঙুন: ছোট ছোট অস্বস্তি বড় পরিবর্তন আনতে পারে

প্রতিদিন একটু অস্বস্তিকর কিছু করুন—বাম হাতে দাঁত ব্রাশ করুন, অন্য চেয়ারে বসুন, নতুন পথে হাঁটুন। এই ছোট ছোট পরিবর্তন মস্তিষ্কে নতুন নিউরাল সংযোগ তৈরি করে। ফলে বাড়ে ফোকাস, নমনীয়তা এবং শেখার গতি।

৭. স্মৃতিচর্চা: প্রতিদিন রাতে যা শিখলেন তা মনে করুন

রাত ঘুমাতে যাওয়ার আগে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে ভাবুন—আজ কী শিখলাম? কী কথোপকথন মনে রাখার মতো? এই অভ্যাস মস্তিষ্ককে তথ্য সাজাতে এবং সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং শেখা আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।

৮. ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন

আপনার চারপাশ যদি শুধু আপনার মতো চিন্তাভাবনার মানুষে ভরা থাকে, তবে নতুন কিছু শেখা কঠিন। নিজেকে এমন মানুষের সঙ্গে যুক্ত করুন, যারা আপনাকে ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্য করে। এতে বাড়বে দৃষ্টিভঙ্গি, আর দৃষ্টিভঙ্গিই বাড়ায় বুদ্ধিমত্তা।

বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর জন্য বড় কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না—প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই পারে আপনাকে করে তুলতে আরও প্রজ্ঞাবান, সচেতন এবং মানসিকভাবে প্রখর। আজ থেকেই শুরু করুন যেকোনো একটি অভ্যাস, দেখবেন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে আপনার চিন্তার জগৎ।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

রাকিব

×