ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেই খাবারটি সবচেয়ে কার্যকর

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ১ জুন ২০২৫

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেই খাবারটি সবচেয়ে কার্যকর

ছবিঃ সংগৃহীত

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, না হলে হৃদরোগ, স্নায়ু ক্ষতি, বা চোখের সমস্যা সহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। ওষুধ ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক খাবারও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তেমনই একটি শক্তিশালী খাবার হলো করলা — আমাদের চেনা কড়া স্বাদের এই সবজিটি ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উপকার করে, এবং একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।

করলা কেন বিশেষ?

করলায় রয়েছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেগুলো ইনসুলিনের মতো কাজ করে। ইনসুলিন এমন একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। করলার উপাদানগুলো শরীরের গ্লুকোজ ব্যবহারের পদ্ধতি উন্নত করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

করলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ:

চ্যারান্টিন (Charantin): এটি একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক যা শরীরকে ইনসুলিনে আরও সংবেদনশীল করে তোলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।

পলিপেপ্টাইড-পি (Polypeptide-P): যাকে "প্ল্যান্ট ইনসুলিন" বলা হয়, এটি মানব ইনসুলিনের মতো কাজ করে।

উচ্চ মাত্রার খাদ্য আঁশ (High dietary fibre): এটি শর্করা হজমের গতি কমায়, ফলে খাবার পর রক্তে হঠাৎ শর্করা বৃদ্ধির ঝুঁকি কমে।

করলা কীভাবে সাহায্য করে?

ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে: করলা শরীরে ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়ায়।

গ্লুকোজ শোষণে সাহায্য করে: রক্ত থেকে কোষে গ্লুকোজ শোষণ সহজ করে।

শর্করার মুক্তি ধীর করে: উচ্চ আঁশযুক্ত করলা কার্বোহাইড্রেট হজম ধীর করে, ফলে রক্তে ধীরে ধীরে শর্করা প্রবেশ করে।

অগ্ন্যাশয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করলা ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ পুনর্জীবিত করতেও সাহায্য করতে পারে।

বিজ্ঞানের ভাষ্যে করলার কার্যকারিতা

Journal of Ethnopharmacology-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করলার নির্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রক্তে উপবাসকালীন শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে।

Asian Pacific Journal of Tropical Disease-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করলার চ্যারান্টিন ও পলিপেপ্টাইড-পি ইনসুলিনের মতো কাজ করে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, করলার রস খাওয়ার ৯০ মিনিটের মধ্যেই রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করে।

করলার অতিরিক্ত স্বাস্থ্য উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: করলা প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ সমস্যা।

ওজন কমাতে সহায়ক: কম ক্যালোরি ও উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া কমায়।

হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় সহায়ক: খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: করলায় ভিটামিন এ, সি, ও কে আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে।

হজমে সহায়ক: কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

সতর্কবার্তা: করলা ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়। আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তাহলে করলা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্রঃ Timesofindia

নোভা

×