ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব শরীফ

খালি হাতে ব্যায়াম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

খালি হাতে ব্যায়াম

শরীরকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও রোগমুক্ত রাখতে ব্যায়ামের চর্চা করা দরকার। সুস্থ শরীর মনকেও সুস্থ করে তোলে। শরীর যদি সুস্থ থাকে তাহলে কাজে কর্মে ও আচরণে তা প্রতিফলিত হয়। যদি থাকে সুস্থ দেহ, হবে সুন্দর মন, কর্মব্যস্ত থাকতে পারবেন সারাজীবন। পৃথিবীর তাপমাত্রার বৃৃদ্ধির কারণে রোগ বালাই বেড়েই চলেছে এবং ভেজাল খাদ্যের প্রভাব থেকে পরিত্রাণ পেতে ব্যায়ামের চর্চা বা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, শরীরের ওজন কমানো, বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, তৃপ্তিতে ঘুম, মানসিক চাপ কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করাসহ অনেক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় নিয়মিত ব্যায়াম থেকে। ডায়াবেটিকস্ ও ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখতে সহায়তা করবে ব্যায়ামের চর্চা। যন্ত্রপাতিবিহীন খালি হাতে ব্যায়াম করলে খুব অল্পসময়ে আপনার রুটিন সম্পূর্ণ করতে পারবেন। যন্ত্রপাতিসহ ব্যায়াম করতে হলে আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু ক্লাব বা সংগঠন এই কাজগুলো করে থাকে। ব্যায়াম করার যন্ত্রপাতিগুলোর অনেক দামও বটে। খালি হাতে ব্যায়াম করলে আপনাকে কোন সংগঠনের সদস্য হতে হবে না। দিনে বা রাতের নির্দিষ্ট অবসর সময়ে ব্যায়াম করতে পারবেন। খালি হাতে ব্যায়াম বলতে খুব সহজে বলা যায়Ñ পুরো শরীরকে গরম করার মতো ব্যায়ামই হচ্ছে খালি হাতে ব্যায়াম। বর্তমানে আমাদের দেশে নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে তেমন কোন মাঠ-ঘাট নেই বললেই চলে। যাও আছে তাও আবার প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বর্তমানে একদিকে আধুনিকতা অন্যদিকে সৌন্দর্য চর্চা এক হওয়াতে ব্যায়ামের কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সকলের নিকট। খালি হাতে ব্যায়াম করতে অন্য কারও সাহায্য প্রয়োজন হয় না। আপনি চাইলে নিজে নিজে বাসায় করতে পারেন। এই ব্যায়াম করতে বাড়তি কোন জায়গা বা কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না। খালি হাতে ব্যায়ামে আপনার মাথা হতে পা পর্যন্ত সব পেশির খুব ভাল ব্যায়াম হয়। এ ধরনের ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে। কোন প্রকার রোগ সহজে আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। এই ব্যায়ামে কোন প্রকার যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না বলে খালি হাতে খুব সহজ হয় এবং উৎসাহ আসে। সব বয়সের মানুষই এই ব্যায়াম করতে পারবেন। ব্যায়ামের কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। তবুও ৮ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর বা তদূর্ধ্বে সকলে করতে পারবেন। আপনার শরীর ফিট থাকলে খালি হাতে ব্যায়াম করতে কোন বাধা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ খালি হাতে ব্যায়াম করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শের খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবে যারা কঠিন রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যায়াম করবেন। আপনার শরীর ব্যায়াম করার মতো উপযোগী বা ফিট কিনা, চিকিৎসক সে বিষয়ে যথেষ্ট পরামর্শ দেবে। খালি হাতে ব্যায়াম যোগ-ব্যায়ামের মতোই উপকার রয়েছে। কয়েকদিন ব্যায়াম করলে আপনি এর সুফল বুঝতে পারবেন। অতিরিক্ত ব্যায়াম করা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ সর্বদা সতর্ক থাকতে বলেছেন। পরিমাণ মতো ব্যায়াম যেমনÑ শরীরের উপকার, অতিরিক্ত ব্যায়াম তেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আপনি চাইলে যন্ত্রপাতি ছাড়া খালি হাতে ব্যায়াম আজই শুরু করতে পারেন। ব্যায়ামের নিয়ম প্রত্যেক ব্যায়ামেরই কিছু না কিছু নিয়ম আছে। কয়েকটি খালি হাতের ব্যায়ামের নিয়ম জানিয়ে দিচ্ছিÑ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই পাশে পাখির ডানার মতো ছড়িয়ে দিন। এবার চাকতির মতো হাত দুটো ঘোরানো শুরু করুন। গুনে গুনে ১০ বারে ৩ সেট করে ৩০ বার করুন। এবার একই নিয়মে হাত দুটো পেছনের দিকে ঘোরান। দুই পা বেশ খানিকটা ফাঁকা করে দাঁড়ান। দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিন ডানার মতো। এবার নিচু হয়ে ডান হাত দিয়ে বাম পায়ের পাতা এবং বাম হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। এটি দ্রুত করতে হবে কমপক্ষে ৫০ বার। সোজা হয়ে দাঁড়ান, হাত দুটি মাথার উপরে সোজা করে ধরে রাখুন। এবার সামনের দিকে ঝুঁকে পায়ের পাতা স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। ২৫ বার করুন টানা। শেষ হলে আরও ২৫ বার। ২ সেট মিলিয়ে ৫০ বার করুন। শক্ত বিছনায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত মাথার পেছনে সোজা করে বিছানার সঙ্গে স্পর্শ করুন, এবার কোমর ও পা না নাড়িয়ে ধীরে ধীরে দেহের উপরের অংশটা তুলে বসুন। এবার বসে সামনের দিকে ঝুঁকে হাত দিয়ে পা ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এভাবে ১৫ বার করে ২ সেট মোট ৩০ বার করুন। শুয়ে থেকেই দুই হাত দিয়ে মাথার পেছনটা ধরে রাখুন। এবার মাথাটা বিছানা থেকে খানিকটা উপরে তুলুন। এবার দুই পা এক সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। এভাবে ১৫ বার করে ২ সেটে ৩০ বার করুন। দুই হাত আগের মতো মাথার পেছনে থাকবে। কনুই দুটি থাকবে কিছুটা সামনের দিকে। এবার বাম পায়ের হাঁটু দিয়ে ডান কনুই স্পর্শ করুন, আবার ডান পায়ের হাঁটু দিয়ে বাম কনুই স্পর্শ করুন। এটিও ১৫ বার করে ২ সেটে মোট ৩০ বার করতে হবে। ব্যায়াম করলে কিংবা শারীরিক পরিশ্রমে দেহ থেকে ঘামের সঙ্গে পানি বেরিয়ে যাওয়ার মাত্রাটা দ্রুত হয়, তাই এই দিনগুলোতে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস করুন। খাবার-দাবারে এ সময়টায় যতœবান হতে হবে। দিনে অন্তত ১টি ফল খেতে হবে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। দড়ি লাফানোর অভ্যাসও করতে পারেন। কিংবা ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ুন মাঠে। নিয়মিত ব্যায়ামে দেহের গঠন সুন্দর হয়। ছবি : রুকু মডেল : স্নিগ্ধা
×