
ছবি: সংগৃহীত
দেশে যৌতুক নিরোধ আইন থাকলেও যৌতুকের মামলার সময়, প্রমাণ আর প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা যায়। অনেক নারীই বুঝে উঠতে পারেন না যে যৌতুকের মামলাটি কখন করতে হবে, দেরি করলে কী প্রভাব পড়ে, আর মামলায় কাদের সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ।
আইনজীবীদের মতে, যৌতুকের মামলা তখনই করা সম্ভব, যখন স্বামী বা তার পরিবার স্ত্রীর কাছ থেকে বা স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে যৌতুকের দাবী করে। এই দাবি সাধারণত গোপনেই হয়—বাড়ির মধ্যে, বেডরুম বা পারিবারিক পরিবেশে। ফলে বাইরের কারও সামনে যৌতুক দাবি হওয়ার ঘটনা বিরল। তাই যৌতুক মামলায় স্বামী, স্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাই মূল সাক্ষী হন।
যৌতুকের দাবি মানেই অপরাধ
যৌতুক নিরোধ আইন অনুযায়ী, যৌতুক চাওয়া মাত্রই আইনত অপরাধ সংঘটিত হয়। এ ঘটনার পরপরই স্ত্রী চাইলে মামলা করতে পারেন। অনেকেই ভেবে থাকেন যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতন বা বড় কোনো ঘটনা না হলে মামলা করা যাবে না, যা পুরোপুরি ভুল ধারণা।
মামলার সঠিক সময়
যৌতুকের ঘটনা ঘটার পর মামলা যত দ্রুত করা যায়, তত ভালো। কারণ ঘটনা ঘটার পরপর মামলা করলে আদালতের কাছে তা বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়। আর যদি স্ত্রী বাবার বাড়ি গিয়ে দুই-তিন মাস পরে মামলা করেন, তখন আদালত মনে করতে পারে অন্যের প্ররোচনা বা অন্য উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে। ফলে দেরি করা মামলার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
মামলা করার টাইম ফ্রেম
আইনে যৌতুক মামলার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, অর্থাৎ কাগজে-কলমে কত দিনের মধ্যে মামলা করতে হবে তা বলা হয়নি। তবে বিচারকেরা ‘যৌক্তিক সময়’ বিবেচনা করেন। দীর্ঘ সময় পর মামলা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সন্দেহ তৈরি হয়, যা মামলার ফলাফলে প্রভাব ফেলে।
ডিভোর্স হলে কী হয়?
যৌতুক মামলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ডিভোর্স। যদি স্বামী যৌতুক দাবি করার কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রীকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দেন এবং সেই নোটিশ স্ত্রী রিসিভ করেন বা তার ঠিকানায় পৌঁছে যায়, তাহলে যৌতুক মামলা সাধারণত টেকে না। কারণ বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন হলে স্ত্রী কোর্টে যৌতুক দাবি নিয়ে মামলা করার সুযোগ হারান। তাই ডিভোর্সের নোটিশ হাতে পাওয়ার আগেই মামলা করা জরুরি।
যৌতুক মামলার পর কী হয়?
যৌতুক মামলায় আদালতের সামনে স্বামীকে দুইটি পথের একটিতে যেতে হয়—
১) আদালতে হলফনামা দিয়ে স্বীকার করতে হয় যে তিনি ভুল করেছেন এবং ভবিষ্যতে যৌতুক চাইবেন না।
২) না হলে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি পাবেন, যা কারাদণ্ডসহ অন্যান্য শাস্তিও হতে পারে।
কী করবেন?
আইনজীবীরা বলছেন, যৌতুকের শিকার হলে প্রথমে ভয় না পেয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আইন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সঠিক সময়ে মামলা করলে ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেরি করলে মামলার গ্রহণযোগ্যতা, প্রমাণের জোর এবং ন্যায়বিচার—সবই দুর্বল হয়ে পড়ে।
আঁখি