
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয়। প্রায়ই দেখা যায়, বাবা জীবিত থাকাকালীন ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন। এতে অনেক সন্তানই হতাশায় ভোগেন এবং আইনি পরামর্শ নিতে বাধ্য হন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—বাবা যদি জীবিত অবস্থায় কোনো সন্তানকে সম্পত্তি না দেন, তাহলে সেই সন্তান কি পরে সেই সম্পত্তির দাবিদার হতে পারেন? আইন এ বিষয়ে কী বলে?
সম্প্রতি দুটি ঘটনা সামনে এসেছে যা এই প্রশ্নকে আরও জোরালো করে তোলে।
প্রথম ঘটনাটি চাঁদপুরের এক ইঞ্জিনিয়ারকে ঘিরে। তিনি অভিযোগ করেন, তার পিতা মারা যাওয়ার আগে ৩৭.৫০ শতাংশ জমি তার বড় ভাইকে হেবা (দান) করে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু বড় ভাই এ বিষয়ে কখনো ছোট ভাইকে কিছু জানাননি। বরং ছোট ভাইয়ের সাহায্যে সংসারের নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। এখন ইঞ্জিনিয়ার ছোট ভাই নিজেকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত মনে করছেন।
দ্বিতীয় ঘটনা কেরানীগঞ্জ কদমতলীর এক বিধবা নারীর। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ও তার শিশু সন্তান শ্বশুরবাড়িতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার স্বামী জীবিত অবস্থায় নিজের উপার্জনে একটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছিলেন, কিন্তু এখন শ্বশুরপক্ষ বলছে—“তোমরা এই বাড়ির কোনো অংশ পাবে না।” এমনকি দাবি করা হচ্ছে, পিতার আগে ছেলে মারা গেলে তার সন্তান বা স্ত্রী কোনো সম্পত্তি পাবে না।
আইনের অবস্থান কী?
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও ইসলামিক উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তার সম্পত্তির পূর্ণ অধিকার ভোগ করেন। তিনি ইচ্ছা করলে কোনো সন্তানকে সম্পত্তি দিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলেই কাউকে কিছু না দিয়ে দিতে পারেন। এই সিদ্ধান্তে কারো আইনি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। ফলে বাবা জীবিত অবস্থায় যদি কোনো সন্তানকে সম্পত্তি না দেন, তাহলে সেই সন্তান চাইলেও তখন আদালতে মামলা করতে পারবেন না।
তবে যদি পিতা মৃত্যুর আগে কোনো উইল না করে যান অথবা হেবা/দান রেজিস্ট্রি না করে যান, তাহলে মৃত্যুর পর ইসলামিক উত্তরাধিকার আইনের (ফরজ বা মিরাস) ভিত্তিতে সন্তানরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ন্যায্য অংশ পাবে। কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য করলেও, মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার আইনে সে তার অংশ থেকে বঞ্চিত হবে না।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি কোনো সন্তান পিতার জীবদ্দশায় মারা যান এবং তার উত্তরাধিকারী (যেমন সন্তান বা স্ত্রী) বেঁচে থাকেন, তাহলে তারা সেই মৃত সন্তানের ভাগ অনুযায়ী সম্পত্তির অধিকারী হবেন। আগে এমন হলে তারা সম্পত্তি পেতেন না, তবে এখন আইন তা স্বীকৃতি দিয়েছে।
সন্তান জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি না পেলে তা নিয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়, যদি না পিতা মৃত্যুর পর উইল বা রেজিস্ট্রিকৃত হেবা রেখে যান। তবে মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার আইনে সন্তানের ন্যায্য অংশ পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। সমাজে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি—যাতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি না বাড়ে এবং আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।
আসিফ