
মো. অহিদুজ্জামান তারিক, সহকারী পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক
মো. অহিদুজ্জামান তারিক স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়াকালীন চাকরির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বন্ধুদের আলাপ-আলোচনা করতে দেখতেন। জানতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধারণ কর্ম পরিবেশ, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সম্পর্কে। আর তখন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির প্রতি একটি আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল।
তারিকের চাকরির প্রস্তুতি ছিল বিসিএস কেন্দ্রিক। তিনি ইংরেজি ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং এবং গণিতের পেছনে অনেক সময় দিয়েছেন। বিসিএস একটি লম্বা যাত্রা, তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার হওয়ার পর থেকে পুরোদমে ব্যাংকের চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেন। সরকারি ব্যাংকের বিগত বছরের প্রশ্নব্যাংক কিনে প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকেন। বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি থাকায় বাংলা, সাধারণ জ্ঞান এবং কম্পিউটারের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। লিখিত পরীক্ষার জন্য সমসাময়িক বিষয়ে পত্রিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নোট করা ছিল, যা তারিককে অনেক সহায়তা করেছে। গণিতের জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত এবং উচ্চতর গণিত বই দুটি আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তারিক বলেন, ‘নিয়মিত নোট করার অভ্যাসের কারণে আমার লেখার গতি ভালো ছিল, যা আমাকে লিখিত পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর শেষ করতে সহায়তা করেছে। মৌখিক পরীক্ষার জন্য আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে থাকা বেসিক কিছু তথ্য, মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, বিভিন্ন ব্যাংকিং টার্ম ইত্যাদি বিষয় এবং নিজের স্নাতক বিষয়ের ওপর পড়াশোনা করে যাই।’
মো. অহিদুজ্জামান তারিক যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের মাহিদিয়া গ্রামের সন্তান। শৈশবে গ্রাম-বাংলার জীবনকে পুরোদমে উপভোগ করেছেন। তার বাবা বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) তে চাকরি করতেন। বাবার চাকরিতে বদলির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষায় বসেন। প্রথম ধাপেই সফলতার দেখা পান।
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তারিক বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের বেকারত্বের হারের প্রেক্ষাপটে একটি চাকরি সোনার হরিণের মতো। মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং ব্যাংকিং সেক্টরের রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি একইসঙ্গে সম্মানজনক এবং খ্যাতিসম্পন্ন। চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের রোল দেখে অনুভূতিটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল না!’
চাকরির প্রস্তুতির পুরো সময়টাই তারিক গ্রামের বাড়িতে কাটিয়েছেন। সেখানে মা সর্বক্ষণ তাকে উৎসাহ জোগাতেন। তারিক জানান, ‘চাকরির প্রস্তুতির যাত্রাটি অনেক লম্বা এবং কণ্টকাকীর্ণ। এখানে ব্যর্থতা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এ ছাড়া এলাকাবাসীর কটুকথা তো আছেই। এসব কিছুই চারদিক থেকে যখন ঘিরে ধরত তখনই আমার মা এবং বাবা আমাকে নানাভাবে বুঝিয়েছেন, মানসিকভাবে শান্ত থাকতে সহায়তা করেছেন। আমার বাবা সর্বদাই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে কখনোই হতাশ না হতে বলেছেন। এ ছাড়া আমার এই যাত্রাই আমার বন্ধুরা, সহধর্মিণী এবং পূর্বের চাকরিস্থলের সহকর্মীরাও আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুনদের চাকরির প্রস্তুতির বিষয়ে মো. অহিদুজ্জামান তারিকের মন্তব্য- যারা স্নাতকে অধ্যয়নরত আছেন, তাদের নিজ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এবং একইসঙ্গে ইংরেজি বলা এবং লেখাতে মনোনিবেশ করার জন্য পরামর্শ দেব। স্নাতক শেষ করে চাকরির জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রস্তুতির জন্য সর্বপ্রথম ইংরেজি এবং গণিতের ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। এরপর বিগত সালগুলোর প্রশ্নের ধরন দেখে কী কী পড়া লাগবে, সেগুলোর একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। অনলাইন হোক আর অফলাইন, নিয়মিত পরীক্ষা দিতে হবে। একইসঙ্গে নবম-দশম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীকে গণিত কিংবা ইংরেজি পড়ানো যেতে পারে। তাহলে অনেক বিষয়েই নিয়মিত চর্চা থাকবে। যেসব বিষয়ে নিজের দুর্বলতা আছে, সেখানে বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকাগুলোর আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি এবং সম্পাদকীয় অংশ পড়া, বোঝা এবং সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো লেখা নিজের ভাষায় নোট করাটা দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মী হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারিক, যেন একজন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন। এ ছাড়া উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে দেশের বাইরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পরিকল্পনা আছে মো. অহিদুজ্জামান তারিকের।
চাকরি বাজার ডেস্ক
প্যানেল