ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

যুদ্ধের ছেঁড়া ছায়ায় ফিরছে তেহরানবাসী: ‘মনে হচ্ছে স্বর্গে ফিরেছি’, তবুও অনিশ্চিত শান্তির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২১:২১, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:২২, ২৭ জুন ২০২৫

যুদ্ধের ছেঁড়া ছায়ায় ফিরছে তেহরানবাসী: ‘মনে হচ্ছে স্বর্গে ফিরেছি’, তবুও অনিশ্চিত শান্তির আশঙ্কা

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলের ১২ দিনের বোমা বর্ষণের পর, ধীরে ধীরে নিজের শহরে ফিরছেন ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দারা। কিন্তু ফিরে পাচ্ছেন এক বদলে যাওয়া শহর—ভাঙা দালান, পুড়ে যাওয়া স্মৃতি এবং এক শঙ্কিত নীরবতা।

সোমবার ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর তেহরানের দিকে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে প্রবেশপথগুলো। গাড়িগুলো বোঝাই পরিবার, ব্যাগ-পত্র, আর হৃদয়ে অজানা আশংকা—নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরা যাবে তো?

ধ্বংসস্তূপের শহরে ফেরা, অনিশ্চয়তার ভিতরে নিঃশ্বাস

১২ দিনের এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৬০০ জনের বেশি ইরানি, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ। রাজধানী ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে গেছেন গ্রামের দিকে। এখন যুদ্ধবিরতির পর কিছু পরিবার ফিরতে শুরু করলেও কারো মনে নেই পূর্ণ স্বস্তি।

নিকা, ৩৩ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার, যিনি তেহরান থেকে ২৮৬ কিলোমিটার দূরে জানজান শহরে আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন, বলেন, “শরীরিক নিরাপত্তায় থাকলেও নিজের বিছানায় ফিরে ঘুমাতে পারার অনুভূতিটাই যেন স্বর্গ... কিন্তু যুদ্ধ আবার শুরু হবে না তো—এই ভয় কাটছে না।”

যুদ্ধ থামলেও স্মৃতির রক্তাক্ত ছাপ রয়ে গেছে

যুদ্ধ শুরু হয় ১৩ জুন ভোরে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আগাম হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একে ‘প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ বলেন। তারপর শুরু হয় ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি গোলাগুলি, যা তেহরান শহরের কেন্দ্রেও আঘাত হানে—এমন ঘটনা কয়েক দশকে দেখা যায়নি।

যুদ্ধের পঞ্চম দিনে তেহরানবাসীকে সরিয়ে নিতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ। মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও তেহরান খালি করার আহ্বান জানান।

'জীবন থেমে গিয়েছিল'—ছাত্রীর কণ্ঠে কান্না

সাবা, ২৬ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, বলেন, “আমি তেহরানে থাকতাম, পড়াশোনা করতাম, চাকরি করতাম—সব একা সামলাতাম। যুদ্ধের শুরুর দিকে ভাবতেই পারিনি সব বন্ধ হয়ে যাবে।”

যুদ্ধ শুরু হলেও প্রথমে স্বাভাবিক জীবন চালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি—ক্লাসে যাওয়া, বাজার করা, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো।

“কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে একের পর এক সব কিছু বন্ধ হয়ে গেল। পরীক্ষাও স্থগিত হলো, অফিস থেকে বলা হলো বাসা থেকে কাজ করতে। বন্ধুদের একে একে চলে যেতে দেখে একাকীত্বে ভেঙে পড়ি।”

সাবা আরও বলেন, “দিনে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। কিন্তু রাত নামলেই যখন বোমার শব্দ, এয়ার ডিফেন্স শুরু হতো—তখন আর নিজেকে বুঝ দিতে পারিনি।”

শেষ পর্যন্ত কুচান থেকে তাঁর বাবা এসে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই থাকছিলেন যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত।

যুদ্ধ থেমেছে, আতঙ্ক থামেনি

তেহরানের বুকে এবার যে যুদ্ধের ছায়া নেমেছিল, তার প্রভাব শুধু ইমারতের উপর নয়—মানুষের মনে, সমাজে এবং ভবিষ্যতের ওপরও।

যদিও অনেকে ফিরে এসেছেন, কেউই নিশ্চিত নন এই শান্তি কতদিন স্থায়ী হবে। শহরের রাস্তাগুলো আবার ভরে উঠলেও আতঙ্ক আর অস্থিরতা এখনো ছায়ার মতো ঘুরছে তেহরানের আকাশে।

সূত্রঃ আল জাজিরা

ইমরান

×