
ছবি: সংগৃহীত।
ইরানের সঙ্গে টানা ১১ দিনের ভয়াবহ সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও নিজেদের ‘জয়ী’ দাবি করছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তেহরানের বিরুদ্ধে তারা তাদের সব লক্ষ্য অর্জন করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও সামরিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। বরং এই যুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা খেয়েছে।
আলজাজিরায় প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে স্বাধীন পর্যবেক্ষক ওরি গোল্ডবার্গ লিখেছেন, যুদ্ধের সূচনালগ্নে ইসরায়েলের মূল দুটি লক্ষ্য ছিল—ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা এবং দেশটির সরকারকে পতনের মুখে ঠেলে দেওয়া। এই দুই লক্ষ্যই পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তেল আবিব।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের কৌশল ছিল শত্রু পক্ষের শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করে গুপ্তহত্যা চালানো। হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যাচেষ্টা কিংবা হামাসের শীর্ষ নেতাদের ওপর আঘাতের মতো কৌশলই তারা এবারও অনুসরণ করেছে। তবে ইরানের ক্ষেত্রে এই কৌশল কাজ করেনি। বরং এতে ইরানিদের মধ্যে ঐক্য ও প্রতিরোধের মনোভাব আরও বেড়েছে।
এই যুদ্ধে ইসরায়েলের বন্দর শহর হাইফা ও রাজধানী তেল আবিবে হামলার সতর্কতা সাইরেন প্রায় নিয়মিতই বেজে উঠেছে। বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষ করে ইসরায়েলের গর্বের প্রতীক 'আয়রন ডোম' এবং ‘এরো থ্রি’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বারবার ব্যর্থ হয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে। ফলে প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যয় হয়েছে বিপুল অর্থ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রিয়েম আমিনাচ জানান, যুদ্ধের প্রথমদিকেই প্রতিদিন প্রায় ৭২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে ইরানের ওপর বিমান হামলায় এবং বাকি অংশ প্রতিরক্ষা ও রিজার্ভ সংরক্ষণে।
আনাদোলু ও মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, ইসরায়েলের ডেভিডস স্লিং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ৭ লাখ ডলার করে ব্যয় করেছে, আর এরো থ্রি ব্যবস্থা ব্যবহার করতে প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার।
ক্ষতির সামগ্রিক পরিসংখ্যান
-
TRT World ও অন্যান্য সামরিক বিশ্লেষকের তথ্যমতে, ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২.৪ থেকে ৮.৭ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
-
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বরাতে জানা যায়, যুদ্ধ পরবর্তী অবকাঠামো পুনর্গঠনে ইসরায়েলকে অতিরিক্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে।
-
এপি জানায়, এই যুদ্ধে ৯,০০০-এরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
-
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪.৩% থেকে কমে ৩.৬%-এ নেমে আসতে পারে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও, এই সংঘাতের ধাক্কা ইসরায়েলের রাজনীতি, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আরও জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নুসরাত