ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ত্রাণকেন্দ্রে ময়দা নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত ৫১

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১৮ জুন ২০২৫

ত্রাণকেন্দ্রে ময়দা নিতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত ৫১

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীরা। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, খান ইউনিসে একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে ভিড় করা জনগণের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। এতে আহত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে। তবে এই হামলা হতে পারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের পূর্বে একটি সড়কের মোড়ে হাজারো মানুষ ময়দা সংগ্রহের আশায় জড়ো হয়েছিলেন। হঠাৎই ইসরায়েলি ড্রোন থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, এরপর একটি ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আহতদের নিকটবর্তী নাসের হাসপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালটি দ্রুত রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অনেকেই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল বলেন, "ইসরায়েলি ড্রোন গুলি চালায়, এরপর ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়। এতে বহু মানুষ নিহত ও আহত হন।"

IDF জানায়, খান ইউনিসে একটি ত্রাণ ট্রাক আটকে পড়েছিল, তার কাছাকাছি থাকা মানুষের দিকে গুলি চালানো হয়, যারা IDF সদস্যদের কাছে চলে আসে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একে "গণহত্যার মতো ঘটনা" বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটির এক কর্মকর্তার মতে, সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ হওয়াই বেশিরভাগ আহতের প্রধান কারণ।

গাজায় খাদ্য বিতরণকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বেড়েছে। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)–এর পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে প্রতিনিয়ত গুলি চালানোর ঘটনা ঘটছে। অনেকক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালিয়েছে বলে দাবি উঠেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় অস্ত্রধারীদের দিক থেকেও হামলার অভিযোগ রয়েছে।

IDF দাবি করে, তারা মানুষকে সতর্ক করে এবং সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তারা প্রকাশ করে না।

ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, যার ফলে তথ্য যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় GHF বেশ কয়েকবার তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। মানুষ বাধ্য হয়ে খাবারের জন্য মাঝরাতেও লাইনে দাঁড়াচ্ছে, যদিও সেনাবাহিনী সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সেখানে যেতে নিষেধ করেছে।

ইতোমধ্যে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং তিনি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, হামাস এই ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহল, ইসরায়েল বা GHF কেউই প্রতিদিনের এই প্রাণহানির ঘটনা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

মুমু

×