
ছবি: সংগৃহীত
ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে টানা তৃতীয় দিনের মতো। রোববার রাতেও তেলআবিব ও জেরুজালেমের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যেখানে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে।
শনিবার রাতভর হামলায় ইসরায়েলে দুই শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও শতাধিক। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা তেহরানে ‘ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু’ ধ্বংস করেছে। ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪ জনে এবং আহত হয়েছেন ১,২৭৭ জন।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তাদের সেনারা ‘দশকের পর দশক ধরে চলা অন্যায় আচরণের জবাবে’ তেলআবিব, হাইফা ও অন্যান্য শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হাইফার একটি বসতিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, তবে এখনো কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করে। তাতে নিহত হন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (IRGC)-এর গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি, তার ডেপুটি ও আরও এক শীর্ষ কমান্ডার।
রোববার রাতের হামলায় ইসরায়েলের বাত ইয়ামে একটি ১০ তলা ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে, যেখানে প্রাণ হারায় ছয়জন, যাদের মধ্যে ছিল ১০ ও ৮ বছর বয়সী দুই শিশু। উত্তরাঞ্চলীয় আরব শহর তামরায়ও চারজন নিহত হয়েছেন ইরানি হামলায়।
বাত ইয়ামে বিস্ফোরণস্থলে কাজ করা প্যারামেডিক ওরি লাজারোভিচ বলেন, ‘ভবনের এক পাশে তখনো আগুন জ্বলছিল, আমরা আহতদের বাছাই করে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। মানুষ ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছিল, অনেকে কান্না করছিল, কেউ কেউ স্বজনদের জড়িয়ে ধরেছিল।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘নারী ও শিশুর পরিকল্পিত হত্যার জন্য ইরানকে চরম মূল্য দিতে হবে।’
ইরানের তেহরানে শারান অয়েল ডিপোতেও ইসরায়েলি হামলা চালায় বলে জানিয়েছে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা তেহরানে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ৮০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, যার মধ্যে ছিল ‘পারমাণবিক গোপন দলিল’ সংরক্ষণের কেন্দ্রও।
তেহরানের এক বাসিন্দা বিবিসি পার্সিয়ানকে বলেন, ‘সবাই শহর ছাড়তে মরিয়া, কিন্তু কোথায় যাবো? কোথাও নিরাপদ মনে হয় না।’
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যদি আয়াতুল্লাহ খামেনি আমাদের বেসামরিক অঞ্চলে হামলা অব্যাহত রাখেন, তবে তেহরান পুড়ে যাবে।’
অন্যদিকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ‘ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে। তাদের এই হামলা বন্ধ করতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
ইরানের সাবেক যুবরাজ রেজা পাহলভি বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে সরকারবিরোধীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ‘সরকার পরিবর্তনই চূড়ান্ত সমাধান, আর এই মুহূর্তে ইরানের সরকার সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে,’ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।
রোববার ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো সরাসরি জড়িত না হলেও ভবিষ্যতে তা হতে পারে।’ তিনি আরও জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত।
এদিকে, বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইরানে বাস্তবে নিহতের সংখ্যা সরকারিভাবে ঘোষিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা HRANA বলেছে, গত দুই দিনে ইরানে কমপক্ষে ৮৬৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেসামরিক ও সামরিক উভয়ই রয়েছেন।
উভয় দেশই আরও প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকি দিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে সারা বিশ্ব গভীর উদ্বেগে রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি।
রাকিব