ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

আয়াতুল্লাহর প্রতিটি ঘাঁটি ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে ইসরায়েল:নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:০৮, ১৪ জুন ২০২৫

আয়াতুল্লাহর প্রতিটি ঘাঁটি ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে ইসরায়েল:নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি

ইরানের অভ্যন্তরে একযোগে চালানো শতাধিক বিমান হামলার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বার্তায় যা বললেন, তাতে শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি নয়, পুরো ইসলামি প্রজাতন্ত্র শাসনব্যবস্থাই যে তার লক্ষ্য, তা বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, “এই অত্যাচারী ও দানবীয় শাসনের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণকে তাদের পতাকার চারপাশে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, স্বাধীনতার জন্য এখনই লড়তে হবে।”

শুক্রবার ভোরের এই আকস্মিক হামলায় ইরানের অন্তত ২০০টি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। নিহত হয়েছেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, এই হামলার উদ্দেশ্য কেবল তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দেওয়া নয়, বরং তার চেয়েও বড় কিছু ইরানের ক্ষমতার মেরুদণ্ডে আঘাত হানা।

নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা যখন আমাদের লক্ষ্য অর্জন করছি, তখন আপনাদের জন্যও স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করছি।” তার এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ইসরায়েল হয়তো শুধু পরমাণু স্থাপনাই নয়, বরং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের গোড়ায় আঘাত হানার চেষ্টা করছে।

হামলাগুলো যতটা সামরিক, ততটাই মনস্তাত্ত্বিক। এর মাধ্যমে ইরানের শাসকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাবকে আরও উসকে দেওয়াই হতে পারে বড় কৌশল। দেশটির ভেতরে এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমছে অর্থনৈতিক সংকট, বাকস্বাধীনতার অভাব, নারী অধিকার হরণ, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এসব বিষয় জনমনে ক্ষোভ জমিয়েছে। এই সুযোগটাই হয়তো নিচ্ছে ইসরায়েল।

তবে এত বড় ঝুঁকি নিয়ে ইসরায়েল কী পেতে চায়? অনেকে বলছেন, নেতানিয়াহু চান, এই হামলা যেন ইরানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যাতে একসময় ধর্মীয় নেতৃত্বের পতন ঘটে। তবে ইতিহাস বলছে, শুধু বাইরের চাপ দিয়ে ইরানের মতো শক্ত কাঠামোর সরকার হটানো কঠিন। বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)-এর মতো অনির্বাচিত শক্তিগুলো এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আর তারা চাইলে আরও কঠোর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে ইরান যদি হামলার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তাহলে পুরো অঞ্চল আরও জটিল হয়ে উঠবে। আর যদি সরকার পতন ঘটে, তাহলেও নিশ্চয়তা নেই যে নতুন নেতৃত্ব আরও উদারপন্থী হবে। বরং কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, নতুন নেতৃত্ব আরও কট্টর হতে পারে, যারা ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবকে আরও খোলাখুলিভাবে সামনে আনবে।

আরেকটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে ইরান যদি পুরোপুরি ধ্বংস না-ও হয়, তাহলে কি তারা আবার পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করবে? এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই বলছেন, ইরান কিছু সক্ষমতা ধরে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো তারা আবারও গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে যাবে।

২০০৩ সালে ইরান কেন পারমাণবিক কর্মসূচি থামিয়ে দিয়েছিল, সেই প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে। সে সময়কার নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনেকেই এখন আর নেই। নতুন নেতৃত্ব কী ভাববে, কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর এই হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই।

নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, ইরানে সরকার পতন হলে সেটাই হবে ইসরায়েলের বড় সাফল্য। কিন্তু ইতিহাস বলছে, কেবল বোমা ফেলে শাসনব্যবস্থা বদলানো খুবই কঠিন। বরং ইরান হয়তো উত্তর কোরিয়ার মতো হয়ে যাবে—চুক্তি ভেঙে নিজের পথেই চলবে। রাশিয়া ও চীন তখন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আগ্রহ দেখাবে না। বরং তারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়াবে।

একজন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছেন, “অনেকে মনে করেন, ইরানে সরকার বদল হলেই সব ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সবসময় আরও খারাপ কিছু অপেক্ষা করে থাকতে পারে।”

এখন পর্যন্ত একটাই বিষয় স্পষ্ট ইসরায়েল আর কূটনীতির পথে হাঁটতে রাজি নয়। তারা মনে করছে, এখন সময় এসেছে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার। আর তার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে ইরানের ভেতরকার আকাশে বোমার ঝড় দিয়ে।

এই সঙ্কট কোন পথে এগোবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ যে আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/ycx2jdt2

আফরোজা

×