
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক সংঘাতের সূচনা হয়েছে। ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ইরানের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর ইরান প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। তেহরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে— এই যুদ্ধের শেষ কেমন হবে, তা ঠিক করবে ইরান। তারা পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আর সে জবাব হবে “প্রচণ্ড ও শক্তিশালী”।
ইসরায়েলের দাবি, ইরান তাদের দিকে একযোগে ১০০টি ড্রোন ছুঁড়েছে। ইরাক জানিয়েছে, ১০০টিরও বেশি ইরানি ড্রোন তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে। জর্ডানও জানায়, তারা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই হামলা আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইরান বলছে, তারা সামরিক এবং কূটনৈতিক— দুই দিক থেকেই জবাব দেবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে, তেহরান মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র হামলার বিষয়ে অবগত ছিল এবং গোপনে অনুমোদনও দিয়েছে।
ইরান এ সন্দেহের পেছনে যুক্তি হিসেবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে, যেখানে তারা বলেছে, এই হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বিত। ইরান আরও বলেছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সম্পূর্ণভাবে মার্কিন সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, যা এই সন্দেহকে আরও জোরালো করে।
এক বিবৃতিতে ইরান সরকার ইসরায়েলকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” হিসেবে আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেছে—ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন বা নিয়ম মানে না। তারা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত এবং যুদ্ধের আগুন ছড়াচ্ছে, এমনকি পশ্চিমা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের দাবিদার দেশগুলোর সামনেও।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তায় তেহরান বলেছে, যদি ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বকে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির প্রয়োজনীয়তা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
ইরান নিজেকে একটি শক্তিশালী আক্রমণের শিকার হিসেবে দাবি করছে এবং দেশজুড়ে অস্থিরতা এড়াতে জনগণকে কেবল সরকারি সূত্র থেকে তথ্য নিতে ও গুজব উপেক্ষা করতে বলেছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আকাশচি বর্তমানে নরওয়ের একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। সেখানে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকের সাথে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তেহরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে এবং তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো গোপন পরিকল্পনা নেয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA)-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
তবে ইসরায়েল বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের জন্য একটি বড় হুমকি, আর এই কারণেই তারা হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।
এই উত্তেজনার মাঝে পুরো অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের শঙ্কা আরও বাড়ছে। এখন প্রশ্ন— এই গল্পের শেষ কে লিখবে? ইরানের ঘোষণা অনুযায়ী, সেই কলম এখন তেহরানের হাতে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/hgReayGSpIo?si=9pKGAsz05Y02t9y6
এম.কে.