ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা

যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৮ মে ২০২৫

যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেবিপিএফএল) সভাপতি তারো আসো সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা নিক্কেই ফোরাম ফর এশিয়ায় যোগ দিতে এবং জাপানের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছান।
জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু তারো আসো বাংলাদেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান এবং একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটি সাধারণ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি মূল ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য কাজ করছে। সেগুলো হলো- সংস্কার, হত্যাকারীদের বিচার এবং একটি সাধারণ নির্বাচন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ঋণ পরিশোধে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগের সরকার আমাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তরুণদের এর বিরুদ্ধে জেগে উঠতে বাধ্য করেছে। যে জগাখিচুড়ি তৈরি হয়েছে, তা ঠিক করার জন্য তরুণরা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিনি বলেন, গত ১০ মাসে জাপান আমাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। আমি জাপানকে তার সমর্থনের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটি এক অর্থে ধন্যবাদ সফর। প্রধান উপদেষ্টা পরিবর্তনগুলো স্বচক্ষে দেখার জন্য তারো আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে আসোর সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন জাপানি আইনপ্রণেতা বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।
আগস্টের মধ্যে আলোচনা শেষ করে সেপ্টেম্বরে চুক্তি সই করবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। চুক্তি সই হলে জাপানই হবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইপিএ করা প্রথম দেশ।
প্রধান উপদেষ্টা জাপানের আইনপ্রণেতাদের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে তাদের সমর্থন কামনা করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থী সংকট থেকে আলাদা, কারণ তারা তাদের বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য ভিক্ষা করছে না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সেক্রেটারি লামিয়া মোরশেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নিক্কেই ফোরামের ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা জাপান যাওয়ার পথে হংকংয়ে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বিরতি করেন। মঙ্গলবার ভোর রাতে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেদেশের শ্রমমন্ত্রী ক্রিস সান তাকে স্বাগত জানান।
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে ক্যাথে প্যাসেফিক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জাপানের উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এই সফরে নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ৩০ মে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সাতটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি দুটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিতে পারে জাপান। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন বাজেটারি সহায়তা হিসেবে, ২৫০ মিলিয়ন রেল খাতের উন্নয়নে এবং ২৫০ মিলিয়ন অন্যান্য খাতের জন্য।
জাপান সফরে মহেশখালী-মাতারবাড়ি অঞ্চলের উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) বাস্তবায়নের বিষয় হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচনার প্রধান বিষয়। জাপান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, সেসব বিষয় তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে ৩০০-এর ওপরে জাপানি বিনিয়োগকারী উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জাপান মাতারবাড়ি অঞ্চলে তাদের দ্বিতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা মহেশখালী-মাতারবাড়ি অঞ্চলকে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত বন্দর এলাকায় রূপান্তর করতে চান। জাপান সফরে প্রধান উপদেষ্টা বড় বড় কোম্পানিকে এই বন্দরে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবেন। এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টা জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাওয়ার্ড পাবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
চারদিনের সরকারি সফর শেষে আগামী ৩১ মে প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

×