
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে যে শীতলতা দেখা দিয়েছে, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই পরিবর্তনের ছায়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (সেভেন সিস্টার্স) যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও পড়েছে। ফলত, বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি, যাতে বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা যায় উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ভারত সরকার মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত একটি চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি এনএইচ-৬ বরাবর নির্মিত হবে এবং এটিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রথম উচ্চগতির করিডর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই করিডর সংযুক্ত হবে কালাদান মাল্টি-মডাল ট্রানজিট প্রকল্পের সঙ্গে, যার মাধ্যমে মিয়ানমারের সিত্তে সমুদ্রবন্দর হয়ে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত একটি নতুন সমুদ্র ও স্থলপথ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার না করেও ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ সম্ভব হবে।
দিল্লির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই প্রকল্পকে বাংলাদেশের প্রতি ‘কূটনৈতিক জবাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গত মার্চে বেইজিং সফরকালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত ভূবেষ্টিত। এই অঞ্চলের জন্য ঢাকা মহাসাগরের (প্রবেশের) একমাত্র অভিভাবক।’
এই মন্তব্যের পর ভারতের ভেতর বিকল্প পথ খোঁজার প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয় বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা আগে থেকেই ভাবছিলাম, তবে বাংলাদেশের অবস্থান আমাদের বিকল্প পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে।’
দ্য হিন্দু জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভারত বর্তমানে তিনটি চলমান রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে, আর পাঁচটির জরিপ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এই আটটি প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি।
ভারতের বিকল্প পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনও এখন আলোচনায় রয়েছে। এই নতুন যোগাযোগ পরিকল্পনার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ কোটি রুপি।
২০২৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপড়েন ও কৌশলগত উদ্বেগ এই সম্পর্ককে নতুন বাস্তবতায় দাঁড় করিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্ভূত টানাপড়েন শুধু কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও।
রাকিব