
দেরনা শহরে ধ্বসে যাওয়া একটি সেতু
লিবিয়ায় ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ, কাদাপানি ও রাস্তাঘাটে পড়ে রয়েছে মরদেহ। এমনকি সমুদ্রেও ভাসতে দেখা যাচ্ছে দেহ। ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যাবিধ্বস্ত লিবিয়ার দেরনা শহরের এখন এটাই আসল চিত্র। পচা দেহের গন্ধ ও স্বজন হারানো পরিবারের লোকেদের আর্তনাদ মিশছে বাতাসে। গণকবর দেওয়া হচ্ছে মরদেহ। পরিচয়ের অপেক্ষায় হাসপাতালে পড়ে রয়েছে বহু লাশ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। খবর এএফপির।
গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরের ওপর তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ড্যানিয়েল’। এর ফলে ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর গ্রিসে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়। গ্রিসের জাগোরা গ্রামের একটি অংশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা প্রায় ১৮ মাসের বৃষ্টিপাতের সমতুল্য। থেসালি, মধ্য গ্রিসের অনেক অংশে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। প্রবল বৃষ্টির ফলে গ্রিসে ১৫ জনের প্রাণহানি হয়। ড্যানিয়েল ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে লিবিয়ার দিকে অগ্রসর হয় ও ক্রমে মেডিকেনে (মেডিটেরানিয়ান হারিকেন) পরিণত হয়। মেডিকেনে’ গ্রীষ্মম-লীয় ঘূর্ণিঝড় ও মধ্য-অক্ষাংশের ঝড়ের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই ঝড় সাধারণত সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে তৈরি হয়। লিবিয়ার জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর তীব্রতর হয় ড্যানিয়েল। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে ১৫০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা।
সবচেয়ে বেশি হয়েছে লিবিয়ার আল-বায়দাতে। সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত রবিবার ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে ড্যানিয়েল আছড়ে পড়ে লিবিয়ার উপকূলে। ড্যানিয়েলের তা-বে ল-ভ- হয়ে যায় আল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, বাতাহ’র মতো বেশ কিছু শহর। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেরনা ও বেনগাজির। প্রবল বৃষ্টি ও বানের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লিবিয়ার শহর দেরনা। সেখানের বেশ কয়েকটি নদীবাঁধ রয়েছে। ঝড়ের তা-বে তিনটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে একেবারে সমুদ্রে নিয়ে ফেলেছে বহু বসতি।