
ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি বাংলাদেশে হঠাৎ করেই শনাক্ত হয়েছে স্ক্যাবিস (Scabies) নামক একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা মানবদেহে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগের প্রকোপ বাড়লে কিডনি বিকলসহ নানা জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
স্ক্যাবিস রোগটি ছড়ায় Sarcoptes scabiei নামক এক ধরনের অতিক্ষুদ্র মাকড়সা বা পরজীবী দ্বারা। এই মাকড়সা মানব ত্বকে গর্ত তৈরি করে ডিম পাড়ে, যার ফলে তীব্র চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এটি একটি ছত্রাকজনিত ভাইরাস না হলেও ছোঁয়াচে পরজীবীঘটিত ত্বকের রোগ।
এই রোগ সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়চোপড়, বিছানা, তোয়ালে ও অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তি, হোস্টেল, মাদ্রাসা কিংবা এমন স্থানে যেখানে বহু মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে, সেখানে স্ক্যাবিস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে।
স্ক্যাবিসের প্রধান লক্ষণ হলো:
* তীব্র চুলকানি (বিশেষ করে রাতে বেশি হয়)
* ত্বকে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি বা ফোসকার মতো দাগ
* ত্বকে সাদা বা ধূসর আঁকাবাঁকা রেখা যা মাকড়সার গর্তের চিহ্ন
এই লক্ষণগুলো সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, হাঁটুর ভাঁজ, বগল, কোমর, ও নিতম্বে বেশি দেখা যায়।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। করণীয়:
* প্রতিদিন পরিষ্কারভাবে গোসল করা
* আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র এড়িয়ে চলা
* বিছানা, তোয়ালে, পোশাক ইত্যাদি আলাদা রাখা
* পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা
বাংলাদেশে স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় প্রধানত পারমিথ্রিন (Permethrin) ক্রিম ব্যবহৃত হয়। এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের সব অংশে লাগিয়ে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা রাখা হয়, এরপর কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হয়। ৭ দিন পর একইভাবে পুনরায় ব্যবহার করতে হয়।
অতিরিক্ত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
* প্রোটোমিটিন বা সালফার ক্রিম (৫ দিন)
* আইভারমেকটিন ট্যাবলেট (সপ্তাহে একটি করে ৪ সপ্তাহ)
তবে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।
*জটিলতা ও সতর্কতা*
চিকিৎসা না নিলে বা অবহেলা করলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনি জটিলতাসহ আরও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা ও সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আঁখি