ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বিশ্বব্যাপী প্রত্যাহারের ঘোষণা

এদেশেও কারও ক্ষতি হয়েছে কি না জরিপ চলছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ৯ মে ২০২৪

এদেশেও কারও ক্ষতি হয়েছে কি না জরিপ চলছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডা. সামন্ত লাল সেন

করোনাভাইরাসের সেই ভয়াবহতা এখন আর নেই। কিন্তু ঘুরে ফিরে আবারও আলোচনায় করোনার টিকা। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে কোভিশিল্ড। এই করোনা টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কোভিশিল্ডের টিকার কারণে ‘থ্রম্বোসিস থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস) নামে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা-প্রতিরোধী টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

এই খবরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশীদের মধ্যেও যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে এখনো কোনো ভুক্তভোগী পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, এই টিকা গ্রহণকারীদের ব্যাপারে জরিপ করা হচ্ছে।
বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং কর্তৃক সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাজার থেকে টিকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আমরা শুনেছি। তবে, আমাদের দেশে এ রকম  কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। আমি এটা জানার পরে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছি এবং তারা এটা জরিপ করছে। মানে যাদের এই টিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের ওপর জরিপ করে আমাকে রিপোর্ট দেবে।
বাংলাদেশেও বহু মানুষকে আ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না জানব আমাদের দেশে কতটুকু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।তবে আমরা এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওরা বলছে টিকা তুলে নিতে কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণ না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত কীভাবে বলব?
আসছে বর্ষায় ডেঙ্গু নিয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গুতে আমার মাকে হারিয়েছি। এটা নিয়ে আমার আবেগ আছে। আমি চাই না ডেঙ্গুর কারণে আর কারও মা হারাক। তবে ডেঙ্গু নিয়ে একটা কথা বলি, এটা এমন একটা রোগ এটা নিয়ন্ত্রণে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় না দুইটা মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা যদি ডেঙ্গুর উৎস বন্ধ না করতে পারি তা হলে যতই হাসপাতাল বানাই কিন্তু এটা বন্ধ হবে না।

আশা করি আমাদের হাসপাতালের যে সক্ষমতা রয়েছে, আমাদের ডাক্তাররা ডেঙ্গু চিকিৎসায় অত্যন্ত দক্ষ। আমি একটা অনুরোধ করব জ্বর হলে সবাই যেন সরকারি ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়। দেরি করলেই মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া এবার স্যালাইনের সংকটও হবে না। আমি ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছি তারা দামও বাড়াবে না।
ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই সবাইকে সচেতনতার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমাদের হাসপাতালের সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের ডাক্তাররাও ডেঙ্গু চিকিৎসায় অত্যন্ত দক্ষ। আমি একটা অনুরোধ করব, জ্বর হলে সবাই যেন সরকারি ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়। দেরি করলেই মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা অনেক আলোচনা এরই মধ্যে করেছি। ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া এবার স্যালাইনের সংকটও হবে না। আমি ওষুধ  কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছি তারা দামও বাড়াবে না।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধে টিকাদান কার্যক্রমে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা প্রতিটি শিশুর টিকাপ্রাপ্তির জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। টিকাদান কার্যক্রমে অসাধারণ সফলতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিন হিরো উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। জনবলের সংকট সত্ত্বেও সারাদেশে কর্মীরা নিরলসভাবে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন এবং এ জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে অতি শীঘ্রই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইউনিসেফ, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সসহ টিকাদান কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রম অনন্য অসাধারণ একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংকে টিকাদান কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি সফল আলোচনা সভা আয়োজন করায় সাধুবাদ জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ সদস্যসহ সবার সমর্থনে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিনি দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে সমৃদ্ধ করে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চান।
অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, ফরিদা ইয়াসমিন, অনিমা মুক্তি গোমেজ, কানন আরা বেগম, জ্বরতি তঞ্চঙ্গ্যা, ইউনিসেফ বাংলাদেশ চিফ অব হেলথ মায়া ভানডেনেট, হু প্রতিনিধি বার্ডান জাং রানা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিজি আহমেদুল কবীর।

×