বিশ্ব চলচ্চিত্রে যুদ্ধভিত্তিক কাহিনীর সিনেমা আলাদা একটি জায়গা দখল করে আছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং বিভিন্ন দেশে সংঘটিত যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা নিয়ে অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয়েছে এ পর্যন্ত। এখনও হলিউড এবং অন্যান্য চিত্রনির্মাণ কেন্দ্রে হরদম নির্মিত হচ্ছে ওয়ার মুভি। এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ অনেকটাই কঠিন। সেলুলয়েডে যুদ্ধবিগ্রহের দৃশ্য যথাযথভাবে তুলে ধরাটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলা যায়। যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করতে গেলে তেমনভাবে সাজাতে হয় দৃশ্যগুলো। যুদ্ধ সরঞ্জাম জোগাড় থেকে শুরু করে তেমন লোকেশনে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সেনা-সামন্ত দিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব সৃষ্টি করাটা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে ওয়ার মুভি নির্মাতার জন্য। তবুও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধভিত্তিক কাহিনীর কালজয়ী সব সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনীর সিনেমার সংখ্যা কম নয়। যেখানে দর্শক মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনার বিবরণ দেখার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পেরেছে সেই উত্তাল সময়ের নানা দুঃখ-বেদনা-শোক-আনন্দ স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের নেপথ্য নানা বিষয়। বলিউডের ইতিহাসে এ পর্যন্ত কম যুদ্ধভিত্তিক গল্পের সিনেমা তৈরি হয়নি। হিন্দী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ার মুভির বিষয়ে গবেষণা চালালে মেলা সিনেমা পাওয়া যায়। বলিউডে বহু আগে থেকেই ওয়ার মুভি তৈরির প্রচলন শুরু হয়েছিল। ১৯৬২ সালে সংঘটিত চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘হাকিকাত’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৪ সালে। যাতে অভিনয় করেছিলেন বলরাজ সাহানি, ধর্মেন্দ্র, প্রিয়া রজনীশ, সুধির, সঞ্জয় খান এবং বিজয় আনন্দ। ছবিটির পরিচালক ছিলেন চেতন আনন্দ। এরপর বলিউডে বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য ওয়ার ‘মুভি’। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো ‘বর্ডার’,‘লাকসা’, ‘দি গাজি এ্যাটাক’,‘মাদ্রাজ ক্যাফে’, ‘রাংগুন’, ‘যোধা আকবর’, ‘আব তুমহারে হাওয়ালে ওয়াতান’, ‘ট্যাংগো চালি’, ‘এলও সি কারগিল’, ‘অশোকা’, ‘১৯৭১’ ‘চিল্ড্রেন অব ওয়ার’ তার আরেকটি আলোচিত যুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘এলওসি কারগিল’। বলিউডের অনেক নামী-দামী জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা অভিত্রেনীকে দেখা গেছে জেপি দত্তের দুই ওয়ার মুভিতেই। পাকভারত সীমান্তে সংঘটিত যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে নির্মিত ছবি দুটি ছিল বিশাল আয়োজনের। বেশ বড় বাজেটের ছবি দুটিতে প্রতিটি শিল্পীই হৃদয় উজাড় করে, মনপ্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছেন। শুধুমাত্র যুদ্ধবিগ্রহের দৃশ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি ‘বর্ডার’ এবং ‘এলওসি কারগিল’ ছবি দুটি। ছবিগুলোতে মানবিক আবেদনও মূর্ত হয়ে উঠেছিল।
পরিচালক জেপি দত্ত অনেকদিন ধরে সিনেমা নির্মাণ করছেন না। এ নিয়ে হিন্দী সিনেমার দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল ছিল। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ের পটভূমিকায় নির্মিত হচ্ছে বলিউডে। তবে জেপি দত্ত বিশাল আয়োজনে বড় বাজেটে যে ধরনের ওয়ার মুভি নির্মাণ করেন তার সঙ্গে তুলনা চলে না বলিউডের অন্যান্য যুদ্ধভিত্তির কাহিনীর সিনেমাগুলো। অনেকদিন বিরতির পর পরিচালক প্রযোজক জেপি দত্ত আরেকটি বড় ক্যানভাসের ওয়ার মুভি ‘পল্টন, নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছেন এ সপ্তাহে। ১৯৬৭ সালে সংঘটিত নাথুলা এবং চোলা যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে সেই যুদ্ধ। ‘পল্টন’ সিনেমায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যাকি , অর্জুন রামপাল, সোনু সুদ, গুরমিত চৌধুরী, হর্ষবর্ধন রানে, সিদ্ধার্থ কাপুর লুব সিনহা, এশা গুপ্তা, সোনাল চৌহান, দীপিকা কাক্কর, মনিকা গিল, অভিলাষ চৌধুরী প্রমুখ। সিকিম অঞ্চলে চীন-ভারত সীমান্তে সংঘটিত নাথুলা এবং চোলা যুদ্ধের কথা অনেকেই ভালভাবে জানেন না। সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় বীর সৈনিকদের আত্মত্যাগ দুঃসাহসী কর্মকান্ড, বীরত্বগাথা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের ঘটনাগুলো রূপালি পর্দায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে পল্টন ছবিতে। ১৯৬৭ সালে সংঘটিত চীন-ভারত যুদ্ধের ঘটনাগুলো এতদিন পরেও সবাইকে ভীষণভাবে আলোড়িত করবে সন্দেহ নেই। যুদ্ধকালীন ঘটনাগুলো বাস্তব করে তুলতে পরিচালক জেপি দত্ত আগের মতোই সিরিয়াস মনোভাব নিয়ে কাজ করেছেন। ছবির প্রতিটি শিল্পীকলাকুশলী চ্যালিঞ্জিং মনোভাব নিয়ে কাজ করেছেন। বলিউডে গতানুগতিক সাধারণ রোমান্টিক এ্যাকশন কিংবা মসলা সিনেমার ভিড়ে ‘পল্টন’ অবশ্যই ভিন্নতার স্বাদ নিয়ে আসছে। যুদ্ধকালীন সময়ের প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপনের পাশাপাশি সবাইকে দেশপ্রেমে নতুনভাবে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এ ছবি, নিঃসন্দেহে বলা যায়।